ডিসি শাহিদ ইকবাল চৌধুরী অফিসে অনুপস্থিত, কিন্তু তাঁর অফিসের সামনে এক চিলতে ঘাসজমিতে বসে রয়েছেন এক আধিকারিক, সঙ্গে একটি সক্রিয় মোবাইল ফোন এবং একটি রেজিস্টার।
পুরনো শ্রীনগরের ফতে কদল এলাকা থেকে ডেপুটি কমিশনারের (ডিসি) অফিস পর্যন্ত হেঁটে এসেছেন নাদিরা আজাজ, দুটো ফোন করবেন বলে। এক, নিজের ছেলের কাছে, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে, দুই, মেয়ের কাছে দিল্লিতে। দুশ্চিন্তায় চোখ জলে ভরে আসছে তাঁর - যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে ছেলেমেয়ের সঙ্গে আর কথা হয়নি।
Advertisment
ডিসি শাহিদ ইকবাল চৌধুরী অনুপস্থিত, কিন্তু তাঁর অফিসের সামনে এক চিলতে ঘাসজমিতে বসে রয়েছেন এক আধিকারিক, সঙ্গে একটি সক্রিয় মোবাইল ফোন এবং একটি রেজিস্টার। তাতে লেখা রয়েছে ১৭৫-এর কিছু বেশি নাম, সকলেই ফোন ব্যবহার করতে আগ্রহী। কিন্তু যত ফোন করা যাচ্ছে, ফোন আসছে তার চেয়ে ঢের বেশি, ফলে স্রেফ ২৩ জন এখন পর্যন্ত ফোন করে উঠতে পেরেছেন।
অফিসের ওপরতলায় আরও দুটি সক্রিয় ফোন রয়েছে, - একটি হেল্পলাইন এবং আরেকটি এক কর্মীর ফোন, যা কার্যত হেল্পলাইনেই পরিণত হয়েছে। প্রতিটি ঘর ভিড়ে ঠাসা, স্থানীয়রা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন হজ যাত্রায় যাওয়া পরিজন, সন্তান, বাবা-মায়ের সঙ্গে।
সাজিদ ভট নামে ওই কর্মীর ফোন বেজে চলেছে অনবরত। তাঁর অনুমান, দৈনিক ৫০০-৬০০ কল চালাচালি করছে এই অফিস, এবং সকাল আটটা থেকে শুরু করে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত নড়তে পারছেন না অফিস থেকে, স্রেফ ফোনের ঠেলায়। "রাত আড়াইটে অবধি বেজেছে আমার ফোন। বিদেশ থেকে ফোন করছেন অসংখ্য মানুষ, আত্মীয়স্বজনের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছেন," বলেন সাজিদ।
অফিসের আরেক কর্মী জুনেইদ বলেন, "মরিয়া হয়ে নিজেদের খবর বাইরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন সবাই। গোটা জেলায় স্রেফ এই দুটো নম্বরই চালু রয়েছে। ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে সবাই আসছেন এখানে। পরিস্থিতি খুব কঠিন।"
রেডিও এবং টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় এই দুটি নম্বর, যার ফলে ইনকামিং কলের বিরতি নেই। এগুলির মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আসছে, তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারবেন কিনা জানতে।
দেড় ঘণ্টা হেঁটে চণ্ডীগড়ে ছেলের সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন রুনিয়া আমিন। শম্বুক গতিতে এগোচ্ছে ফোনের লাইন, সবাই ফোন করছেন পালা করে। একেকজনের বরাদ্দ মাত্র ৪০-৫০ সেকেন্ড। রুনিয়া বলেন, "স্রেফ এইটুকুই জানানো যে আমরা ঠিক আছি, বাড়িতে খাবারদাবার মজুত আছে।"
লাইনের দৈর্ঘ্য দেখে অনেকেই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন, পরের দিন ফের এসে চেষ্টা করবেন বলে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু ডিসি'র অফিস পর্যন্ত আসা সহজ নয়। নিজের স্কুটিতে বসিয়ে মাকে নিয়ে এসেছেন বিশাল, দিল্লিতে তাঁর বোনের সঙ্গে কথা বলতে। "রেডিওতে বলা হয়েছিল ডিসি অফিসে যেতে চাইলে আটকানো হবে না কাউকে, কিন্তু আমাদের তো কত জায়গায় আটকানো হলো," বলছেন তিনি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ভিড়, শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। একে অপরকে জিজ্ঞেস করেন, "দুদিন বাদেই তো ঈদ। সেদিন আমাদের ফোন ব্যবহার করতে দেবে কি? সেদিন যেন ফোন ব্যবহার করতে দেয়।"
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন