দু-চোখ জোড়া স্বপ্ন পেশাদারি ফুটবল মাঠে দাপিয়ে বেড়ানোর। বাধ সেধেছে দারিদ্র্য, অভাব। কিন্তু স্বপ্নের ইচ্ছেডানা যে সত্যিই কোনও বাধা মানে না, তা প্রমাণ করল অভিনব এক বাই-সাইকেল অভিযান। মহারাষ্ট্রের পুণের একদল দরিদ্র, দুঃস্থ শিশুর পেশাদার ফুটবলার হতে চাওয়ার স্বপ্নে গতি দিলেন এক কাশ্মীরি যুবক।
নিজের সাইকেলটি সঙ্গী করে সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পথে নেমেছেন শ্রীনগরের বাসিন্দা সালওয়াত হামরাহ।
১লা মার্চ থেকে শুরু করা এই সাইকেল যাত্রায় ইতিমধ্যেই ছয়টি রাজ্য এবং তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পেরিয়ে এসেছেন হামরাহ। তাঁর সাইকেলের চাকা গড়িয়েছে প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার।
আরও চারটি রাজ্য অতিক্রম করবেন তিনি। স্বপ্ন আর উদ্যোগের মাঝে এখনও বাকি কমপক্ষে দুহাজার কিলোমিটার।
সালওয়াতের এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে বেশ কিছু সংস্থা, তাদের জনকল্যাণ প্রকল্প এবং আমজনতার পক্ষেও মিলছে সাহায্য। প্রতি কিলোমিটার পিছু ৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করছেন ওই যুবক। সংগৃহীত অর্থের পুরোটাই তিনি দান করবেন পুণের ওয়ান্ডার স্কুলের দশম শ্রেণীর পড়ুয়াদের ফুটবল প্রশিক্ষণে।
প্রায় চার বছর ধরে ফুটবল খেলছে ওই শিশুরা। বিভিন্ন ক্লাবেও নিয়মিত খেলছে। আগামীতে জাতীয় অনূর্ধ্ব দলেও তারা যোগ্যতামান অর্জন করতে পারবে বলে আশাবাদী ওয়ান্ডার স্কুলের স্পোর্টস ডিরেক্টর।
কিন্তু তাদের আর্থিক পরিস্থিতিই এর অন্তরায়। বাচ্চাদের পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণে সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সাহায্যের আর্জি নিয়ে হামরাহর কাছে পৌঁছেছিলেন তারা। সাইক্লিং অভিযানের মাধ্যমে এই শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
এর আগেও পুনের আমোটার রোটারি ক্লাব বস্তিতে ১হাজার তিনশো শিশুর শিক্ষার জন্য ২৫ লক্ষ টাকার অনুদান দিয়েছিলেন হামরাহ। সেবার হোপ মঙ্ক - কে টু কে নামে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় উৎসাহী এক আভিযান করেছিলেন তিনি, যা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরিয়ে আনে আমাদের।
সালওয়াতের কাছে এবার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, কোভিডের ভ্রুকুটি। এখনও গোয়া, কেরালা, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটক পাড়ি দেবেন তিনি। চারটি রাজ্যেই করোনা পরিস্থিতি রীতিমত উদ্বেগজনক। এই অবস্থায়, বড় শহরের পরিবর্তে ছোট ছোট শহরে বিশ্রাম নিয়ে, যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে এগিয়ে চলেছেন হামরাহ, অন্যের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে।