অরুণ শর্মা
কাঠুয়ায় যাযাবর গোষ্ঠী বাখেরওয়াল কন্যা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘিরে উত্তাপের আঁচ কাশ্মীর উপত্যকা ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশ। প্রার্থনাস্থলে দিনের পর দিন আটকে রেখে, ওযুধ দিয়ে বেহুঁশ করে, বারংবার গণধর্ষণ ও তার পরের হত্যার ঘটনা সাধারণ মানুষের মেরুদণ্ড দিয়ে হিমস্রোত বইয়ে দিয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের আড়াল করার প্রচেষ্টায় হতবাক প্রায় প্রত্যেকেই। শিশুটির বাবা, ৩৫ বছরের যুবক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে কাঁদছিলেন, ‘‘যদি ওদের কাউকে তুলতেই হত, তাহলে অন্য কাউকে বাছতে পারত ওরা। ও যে বড্ড ছোট ছিল! ও তো কোনটা নিজের ডান হাত, কোনটা বাঁ হাত, সে কথাও বুঝতে পারত না। ও তো কোনওদিন বোঝেনি হিন্দু কাকে বলে আর মুসলমান কাকে বলে!’
নিহত শিশুটির তিন ভাইবোন। অন্য দু ভাই স্কুলে পড়ে। শিশুটিকে তার বাবা নিজের বোনের কাছ থেকে দত্তক নিয়েছিলেন, যখন তার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। কথা বলতে বলতে শিশুটির বাবার গলায় উঠে আসছিল স্মৃতি, ছোট্ট মেয়েটি মায়ের কাজে কেমন সাহায্য করত, বাবার সঙ্গে বেরোতে চাইত সবসময়ে।
শিশুটির মা বলছিলেন, এ বছর গরমের সময়ে ওকে প্রাইভেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। ‘‘আমরা ভাবিনি ও ডাক্তার হবে, কিংবা পড়াবে। আমাদের এত বড় ভাবনা নেই। ও যদি নিজেরটুকু নিজে দেখতে পারত, সেই আমাদের কাছে অনেক।’’
এরকম ঘটনা কাঠুয়ার কোনও যাযাবর সম্প্রদায়ের সঙ্গে আগে কখনও ঘটেনি। শিশুটির বাবা বলছিলেন, গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি খারাপ দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নানারকম গুজব ছড়ানো শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, তাঁরা নাকি জম্মু থেকে গরু চুরি করে কাশ্মীরে পাচার করে দেন, তাঁরা ড্রাগ বিক্রি করেন, তাঁদের এ অঞ্চলে বসবাস নাকি হিন্দুদের পক্ষে বিপজ্জনক। ধর্ষণে মূল অভিযুক্ত সনজি রাম, তাঁদের হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ করেছেন শিশুটির বাবা। শিশুর বাবার অভিযোগ, গ্রামের মধ্যের রাস্তা দিয়ে তাঁদের যাতায়াতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
শিশুর বাবা বলছিলেন, তাঁরা কল্পনাও করেননি একটা দেবস্থানের মধ্যে তাঁদের মেয়েকে অত্যাচার করা হচ্ছে। নিখোঁজ মেয়েকে প্রার্থনাস্থলের মধ্যে খুঁজে দেখার কথা তাঁদের মাথাতেই আসেনি।
মনুষ্যত্বের প্রতি আস্থা হারাননি তিনি। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ যে ভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত করেছে সে ব্যাপারে যে তিনি সন্তুষ্ট, সে কথা জানাতে ভোলেননি কাঠুয়াকন্যার বাবা। মনুষ্যত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের জোরেই সম্ভবত শিশুটির বাবা জানিয়ে দেন, আগামী সেপ্টেম্বরেও, কার্গিলে যখন ঠান্ডা পড়বে, তখন ফের এই কাঠুয়াতেই ফিরে আসবেন তিনি। ‘‘ ফিরব না কেন? এখানে আমাদের ঘরদোর আছে তো! কী আর হবে? বড়জোর মেরেই ফেলবে ওরা।’’