/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/04/Bandhu-Clinic-1.jpg)
'বন্ধু' গাড়ি
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জেরে কেরালায় আটকে পড়েছেন বাংলার অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক। মূলত সেইসব শ্রমিকদের কথা ভেবেই চলতি মাসের গোড়ার দিকে কেরালায় সরকারের তরফে চালু করা হয় একটি অভিনব প্রকল্প, যার ভিত তৈরি করেছে সে রাজ্যের পথপ্রদর্শনকারী চলমান COVID-স্ক্রিনিং ইউনিট, যা কেরালায় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। দিনে প্রায় ৫০০ বাঙালি শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা করছে একটি করে ইউনিট।
রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মিশন (NHM) এবং সেন্টার ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট (CMID) দ্বারা যৌথভাবে পরিচালিত 'বন্ধু' নামের এই চলমান ক্লিনিক গত প্রায় দু'সপ্তাহ ধরে কেরালার এরনাকুলাম জেলার সেইসব এলাকায় কাজ করছে, যেখানে দেশের অন্যান্য রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এবং যেহেতু বাংলার পরিযায়ীরাই সংখ্যায় বেশি, সেহেতু সাদা মিনিবাসের গায়ে নীল রঙে লেখা রয়েছে 'বন্ধু' শব্দটি।
বাসে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ছাড়াও রয়েছে ক্যামেরা, ফ্লাডলাইট এবং সোলার প্যানেল-যুক্ত ছাদ। সঙ্গে রয়েছেন দশ-সদস্যের এক স্বাস্থ্যকর্মী দল, যাঁরা বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া, এবং অসমিয়া ভাষা বলতে পারেন।
আরও পড়ুন: 'বঙ্গবাসী পরিযায়ী শ্রমিকরাই একশ দিনের কাজ পাবেন'
রাজ্যের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই কেরালাবাসী পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটি চলমান ক্লিনিক চালু করার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা, তবে COVID-19 সেই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে। এরনাকুলম জেলায় মিশনের কোঅরডিনেটর ডাঃ অখিল ইমানুয়েল জানাচ্ছেন, "আমরা ভেবে দেখলাম, 'বন্ধু' চালু করার এই উপযুক্ত সময়, যেহেতু করোনাভাইরাস এত দ্রুত ছড়াচ্ছে। বর্তমানে আমরা প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জনের পরীক্ষা করতে পারি। যেসব পরিযায়ী শ্রমিকরা মালয়ালম বলতে পারেন, তাঁরা আমাদের মৌখিক কথাবার্তা চালাতে সাহায্য করছেন।"
সরকারের তরফে এই পরিযায়ীদের বলা হচ্ছে 'অতিথি কর্মী', এবং এঁরা সবচেয়ে ঝুঁকিপ্রবণ গোষ্ঠীগুলির অন্যতম। কেরালায় আনুমানিক ৩০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, এবং গত মাসের শেষে করোনার মোকাবিলায় দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণার পর থেকে সরকারিভাবে ৪,৬০০ টি ত্রাণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে আশ্রয় পেয়েছেন আন্দাজ ১.৪৫ লক্ষ শ্রমিক।
'বন্ধু' ক্লিনিক কবে কোন এলাকায় হাজির হবে, তার আগাম নোটিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাসিন্দাদের। এই বার্তা প্রথমে যায় স্থানীয় জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে, এবং সেখান থেকে আশেপাশের অতিথি কর্মীদের কাছে।
মিনিবাসের ভেতরে অবশ্য চেক-আপ হয় না; গাড়ি যেখানে থামে, তার পাশে একটি অস্থায়ী ক্লিনিক বসে যায়। ডাঃ ইমানুয়েল জানান, "যাঁদের দেহে রোগের লক্ষণ দেখা যাবে, তাঁদেরকে জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে। তারপর থেকে ওই রোগীর দেখভালের ভার নেবে জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র।"
২০১৩ সালে চালু হওয়া NHM বর্তমানে তাদের 'আরোগ্য কেরালাম' অভিযানের মাধ্যমে COVID-19 এর মোকাবিলায় সক্রিয়। অন্যদিকে, চার বছর আগে গঠিত CMID একটি নন-প্রফিট সংস্থা, যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিযায়ী শ্রমিক এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের সমাজে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন