মানারক্কড়ের বিভাগীয় ফরেস্ট অফিসার কে কে সুনীল কুমার জানিয়েছেন, “প্রথম যখন আমরা হাতিটিকে দেখি, তার বেশ কিছুদিন আগেই জখম হয়েছে সে। সুতরাং ঘটনাস্থল যে কোথায়, তা চিহ্নিত করতে পারি নি আমরা। করাটা সহজও হবে না। প্রত্যন্ত এলাকা, ফলে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ওপরেই নির্ভর করতে হয় আমাদের। হাতিটি যেখানে যেখানে গেছে, সেইসব এলাকা খুঁজে বের করলে, এবং বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মীরা তথ্য দিলে, কিছুটা সাহায্য হতে পারে।”
ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ হাতিটিকে বিস্ফোরকে ঠাসা ফল খেতে দিয়েছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু আধিকারিকরা বলছেন, বুনো শুয়োর মারতে এই ধরনের ফল দিয়ে যে ফাঁদ পাতা হয়, সেই ফলই খেয়ে থাকতে পারে ওই হাতিটি, এমন সম্ভাবনা যথেষ্ট প্রবল। কেরালা, কর্ণাটক, এবং তামিলনাড়ু জুড়ে এই ধরনের ফাঁদ হামেশাই পেতে থাকেন গ্রামবাসীরা, যার ফলে এর আগেও এক-আধবার মৃত্যু হয়েছে বুনো হাতির।
সুনীল কুমার বলছেন, “জঙ্গলের কিনারায় পটকা এবং দেশি বোমা ব্যবহার করে শুয়োর এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী মারার খবর এর আগে পাওয়া গেছে। এটাও অবৈধ কাজ, সুতরাং এটাকে ছোট করে দেখছি না আমরা, তবে ওই হাতিটি ভুলবশত এই ফাঁদে পা দিয়েছিল, এমনটা হতেই পারে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বনবিভাগের আধিকারিক বলেন যে হাতিরা যেহেতু দিনে ১০০ কিমি পর্যন্ত হাঁটতে পারে, সেহেতু ঘটনাস্থল থেকে অনেকটাই দূরে এসে পড়ে থাকতে পারে মৃত হাতিটি।
বিভাগের এক ডেপুটি রেঞ্জ অফিসার শশী কুমার বলেন, আগে আরও বেশি ব্যবহৃত হতো শুয়োর মারার বিস্ফোরক-বোঝাই ফাঁদ। “তবে আমরা এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে শুরু করার পর থেকে অনেক কমে গেছে এই ধরনের ঘটনা। আমাদের ডিভিশনে আজকাল প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে।”
প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ডাঃ পি এস ঈশা বলছেন, যারা এই ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। “এটি নিঃসন্দেহে বেআইনি, এবং একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কী করে বলা যায় যে এগুলি শুধু জন্তুদের জন্য? মানুষেরও তো ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
সাইলেন্ট ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন স্যামুয়েল পাচাউ বলেন, “এখন সব রাস্তাই খোলা। তদন্ত চলছে।” উল্লেখ্য, এই পার্কের কর্মীরাই ২৩ মে প্রথম দেখতে পান যন্ত্রণায় উন্মত্তপ্রায় এবং দৃশ্যতই দুর্বল হাতিটিকে। মনে করা হচ্ছে যে ন্যাশনাল পার্কের সীমানা ছাড়িয়ে খাদ্য ও জলের খোঁজে বেরোয় সে, এবং জখম হওয়ার পর দলের সঙ্গে তাল রাখতে না পেরে সম্ভবত দলছুট হয়ে পড়ে।
কীভাবে প্রকাশ্যে আসে ঘটনা
গত ৩০ মে হাতিটির ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে ফেসবুকে একটি আবেগময় পোস্ট লেখেন পালাক্কড় জেলার মানারক্কড়ের সেকশন ফরেস্ট অফিসার মোহন কৃষ্ণন, যা অচিরেই ভাইরাল হয়ে যায়। একটি গ্রামের কাছে নদীতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মোহন এবং তাঁর র্যাপিড রেসপন্স টিম-এর সতীর্থরা খুঁজে পান হাতিটিকে, এবং তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করতে থাকেন। মাথা নিচু করে, জলে শুঁড় ডুবিয়ে শান্তভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল সে, কিন্তু দুটি পোষা হাতির সাহায্যে তাকে নদী থেকে বের করার চেষ্টা করলেই তেড়ে আসছিল। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা একইভাবে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার পর ২৭ মে বিকেলে শরীরে গভীর অভ্যন্তরীণ আঘাতের কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে।
তার পোস্টমর্টেম করেন যে সহকারী ফরেস্ট ভেটেরিনারি অফিসার, সেই ডাঃ ডেভিড আব্রাহাম বলেন, “বিস্ফোরকের প্রভাবে ভয়াবহ ভাবে জখম হয় তার ওপরের এবং নীচের চোয়াল। মুখটা পোকায় ভরে গিয়েছিল, জখমের জ্বালায় কয়েক সপ্তাহ কিছু খেতে পারে নি, জল পর্যন্ত না। অত্যন্ত বেশিরকমের দুর্বল হয়ে পড়েছিল সে।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন