এ যুগের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বানভাসি কেরালা। মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিনশো ছাড়িয়েছে। বহু মানুষ ঘরছাড়া, আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে সে রাজ্যের সরকার। বিপর্যয়ের কালো মেঘে যখন ঢেকে রয়েছে দক্ষিণের এই রাজ্যের আকাশ, তেমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বন্যা দুর্গতদের নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করছেন তো কেউ কেউ বন্যার কারণ ব্যাখ্যা করছেন। কেউ এমন বক্তব্য পেশ করছেন, যা ভেদাভেদ উস্কে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ ভুয়ো খবর ছড়িয়ে বিড়ম্বনা আরও বাড়াচ্ছেন। অন্য রাজ্যের কেউ নয়, এঁরা কেরালারই বাসিন্দা। এঁদের আচরণ ঘরশত্রু বিভীষণের মতোই খানিকটা।
আরও পড়ুন, বানভাসি কেরালার মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াবেন কেমন ভাবে ?
নিজের রাজ্য যখন কার্যত জলের তলায় তখন ওমানে বসে ফেসবুকে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করছিলেন কেরালার রাহুল চেরু পালায়াট্টু। ঘরের লোকেদের দুর্দশা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন ওই যুবক। যে ঘটনা সামনে আসতেই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিল লালু গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানি। ওমানে ওই কোম্পানিতেই কর্মরত ছিলেন রাহুল। ফেসবুকে কেরালার দুর্গতদের নিয়ে ঠাট্টা করার দায়ে রাহুলকে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা। ফেসবুকে কেরালাবাসীদের নিয়ে মন্তব্যের জেরে সমালোচনার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত সোশ্যাল সাইটে ক্ষমাও চেয়েছেন ওই যুবক। ফেসবুকে ভিডিও মেসেজে রাহুল জানান, মদ্যপ অবস্থায় ওই আপত্তিকর মেসেজ করেন ফেসবুকে।
রাহুল চেরু পালায়াট্টু, ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
অন্যদিকে রাজ্যের এমন দুর্দশার সময় বন্যার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন ধর্মীয় নেতারা। সবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের ঢুকতে দেওয়াতেই সে রাজ্যে এমন বিপর্যয় হয়েছে, এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন গুরুমতী নামের এক ধর্মীয় নেতা। তবে তিনি একা নন, অনেকেই এই সবরীমালা ইস্যুকেই কেরালার বন্যার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।
ভারতীয় সেনার পোশাক পরে ছদ্মবেশে এক ব্যক্তিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে খোদ ভারতীয় সেনা। একটি ভিডিওতে ওই ব্যক্তি সেনা অফিসার পরিচয় দিয়ে কেরালায় দুর্গতদের উদ্ধারকাজ নিয়ে ভুল কথা বলছেন বলে দাবি করেছে সেনা। যে ঘটনা সামনে আসার পর ভারতীয় সেনার তরফে টুইট করে এ ধরনের মেসেজ এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, কেরালার ভয়াল বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একটি অডিও ক্লিপও বিতর্কিত হয়েছে। সুরেশ কোচাট্টিল নামে এক ব্যক্তির অডিও টেপ ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। কী রয়েছে ওই বার্তায়? ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছে, কেরালার দুর্গতদের ত্রাণের কোনও প্রয়োজন নেই। যা প্রয়োজন, তার থেকে তাঁদের কাছে বেশি কিছু রয়েছে। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ওই ব্যক্তি। ‘সেবা ভারতি’ নামে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত এক সংস্থাকে অনুদান দিতে সাধারণ মানুষের কাছে আর্জি রেখেছেন ওই ব্যক্তি। শুধু এ দেশেই না, ওই অডিও মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।