Fuel Price Today: বুধবার পেট্রোল-ডিজেলের উপর থেকে কেন্দ্রের আন্তঃশুল্ক কমানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ কালীপুজোর দিন দেশব্যাপী সর্বোচ্চ ৫ টাকা লিটারপ্রতি পেট্রোল এবং ১০ টাকা লিটারপ্রতি ডিজেলের দাম কমেছে। সেই পথে হেঁটে নিজেদের অংশের ভ্যাট কমিয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো। কিন্তু এখনও টুঁ শব্দ করেনি অবিজেপি সরকার পরিচালিত রাজ্য। সেই তালিকায় যেমন নাম রয়েছে রাজস্থান, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, দিল্লির। তেমন নাম রয়েছে কেরল, তামিলনাড়ু। আর এই বৈষম্যে এবার তেড়েফুঁড়ে নেমেছে বিজেপি। কিন্তু রাজ্যগুলোর দাবি, ‘কেন্দ্রের অংশের আন্তঃশুল্ক কমছে মানে আমাদের ভাগের চাপানো ভ্যাটের শতাংশ কমছে। নতুন করে ভ্যাট কমানোর পক্ষে নই।‘
শুক্রবার সেই সিদ্ধান্তেই অনড় থাকল কেরল সরকার। তারা কোনওভাবেই জ্বালানির উপর নিজেদের ভ্যাটের শতাংশ কমাবে না। এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছে সেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী কেএন বালাগোপাল। তিনি বলেন, ‘গত ছয় বছরে রাজ্যের জ্বালানির উপর বসা ভ্যাট শতাংশে কোনও হেরফের ঘটানো হয়নি। বরং একবার কিছুটা কমানো হয়েছে রাজ্যের ভাগে থাকা করের শতাংশ। পাশাপাশি করোনাকালে প্রান্তিক ও প্রভাবিত মানুষদের সাহায্যে একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছে সরকার। তাই কোষাগারের উপর চাপ না ফেলতেই ভ্যাট অপরিবর্তিত রাখবে কেরল সরকার।‘
এদিকে, জ্বালানির মুল্যের ঝাঁজে গলদঘর্ম অবস্থা মধ্যবিত্তের। গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও পেট্রল অনেক আগেই সেঞ্চুরি পার করেছে। একইভাবে রাজ্যের একাধিক জেলায় সেঞ্চুরি পেরিয়েছে ডিজেল। এদিন শহরের পাম্পগুলোতে ডিজেলের দাম ছিল ১০০ টাকার কিছু বেশি। এই অবস্থায় গলদঘর্ম অবস্থা পরিবহণ ব্যবসায়ীদের। ক্রমেই দাম বাড়ছে সবজি এবং ফলের। সম্প্রতি দিল্লিতে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে পেট্রল-ডিজেলের মূল্য নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও একটা আভাস ছিল, হয়তো জিএসটি আওতাভুক্ত হবে এই দুই পরিবহণ জ্বালানি। কিন্তু সবপক্ষ সহমত না হওয়ায় ঝুলে সিদ্ধান্ত।
দামবৃদ্ধি নিয়ে চলছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, দায় চাপানোর পালা। রাজ্য বলেছে কেন্দ্র দায়ী। কেন্দ্র পাল্টা বলছে জ্বালানির উপর বসানো ট্যাক্স থেকে ভরা হচ্ছে রাজ্যের কোষাগারও। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক বলছে, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ায় আগুন পেট্রল-ডিজেল। রাহুল গান্ধি বলছেন, ‘কর তোলাবাজি করছে মোদি সরকার। কেন্দ্রের নিজের ভাগের ট্যাক্স ছাড়ুক। তাহলেই অনেকটা কমবে দাম।‘
এই দুয়ের মাঝে পড়ে হাঁসফাঁস করছে আম জনতা। অস্বাভাবিক এই দামবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে শহরে বসে গিয়েছে একাধিক বেসরকারি বাস। রুট ছোট করেছে অনেক বাস। ওলা বা উবের প্রিমিয়ার সার্ভিস বুকিংয়ে চলছে না এসি।
একটু আরামের জন্য বেশি পয়সা দিয়ে অ্যাপ ক্যাবে চেপেও এসি না মেলায় অনেক সময় সংঘাত বাঁধছে যাত্রী-চালকের। এই প্রসঙ্গে ডানলপ থেকে সেক্টর-৫ পর্যন্ত সপ্তাহে তিন দিন যাত্রা করা এক তরুণীর মন্তব্য, ‘যে তিন দিন অফিস যাই, ডানলপ থেকে উবের বা ওলা প্রিমিয়ার সার্ভিস বুক করেই যাই। কিন্তু এসি চালাতে বললেই আচরণ বদলে যায় চালকদের। এসি না চালানোর নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করেন। আমরা বুঝতে পারি জ্বালানির মূল্য কী হারে বেড়েছে। সেই ভাবে বেড়েছে ওলা বা উবেরের প্রিমিয়ার সার্ভিসের রেন্ট। তাতেও টাকা দিয়ে আরামদায়ক সফর পাই না।‘
এয়ারপোর্ট এক নম্বর এলাকার এক পেট্রল পাম্পে গিয়ে দেখা গিয়েছে অন্য ছবি। এখানে যারা আসছেন প্রত্যেকেই ফুল ট্যাংকি করছেন দুই চাকা বা চার চাকা। এই কাজের পিছনে যুক্তি হিসেবে বলছেন, ‘যেহেতু প্রতিদিন দাম বাড়ছে, তাই যতটা সম্ভব ট্যাংক ফুল রেখে পকেটকে একটু সাশ্রয় দেওয়া।‘ একইভাবে উষ্মা প্রকাশ করেছে বাস মালিক সংগঠন। তারা বলেছে, টিকিট থেকে যা আয়, তার বেশিরভাগ চলে যাচ্ছে তেল ভরতে। বিরোধীরা বলছে, প্রথম মোদি সরকারের শুরুতে ১১৫ ডলার ছিল প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল। সেই সময় পেট্রোল ছিল ৭০-৭৫ টাকা প্রতি লিটার আর ডিজেল ছিল ৬০-৬৫ টাকা প্রতি লিটার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন