/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/09/cats-132.jpg)
ফের নিপা ভাইরাসের দাপট, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
ফের কেরালায় ঢুকে পড়েছে নিপা ভাইরাস। ভাইরাসের সংক্রমণে দু জনের মৃত্যুর পর সতর্ক কেরলা সরকার। সংক্রমণ রুখতে কেরালায় কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠানো হয়েছে। কেরালার কোঝিকোড়ে মৃত্যুর ঘটনা জানার পর স্বাস্থ্য বিভাগ চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে। রাজ্যের আরও চারজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে পাঠানো হয়েছে।
কেরালায় নিপা ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে, ২০১৮ এবং ২০২১ সালেও কোঝিকোড়ে এই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে নিপা ভাইরাস কতটা প্রাণঘাতী এবং কেন কেরালায় বারবার এর কেস রিপোর্ট হচ্ছে?
নিপাভাইরাসকিএবংএটিকতটামারাত্মক?
এটি একটি জুনোটিক ভাইরাস, যা প্রাণীদের মাধ্যমে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার একটি গ্রামে নিপার প্রথম কেস রিপোর্ট করা হয়েছিল। মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর এটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। যারা পশুপালনের সঙ্গে জড়িত তাদের মধ্যেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে বেশি। শুধু মানুষের মধ্যেই নয়, কুকুর, বিড়াল, ছাগল এবং ঘোড়ার মত পোষা প্রাণীতেও সংক্রমণের রেকর্ডরপাওয়া গেছে।
WHO এর মতে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা মারাত্মক। সংক্রমণের পরে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি, এই ভাইরাস মোকাবিলায়। উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয় রোগীকে।
নিপাভাইরাসেরসঙ্গেকেরালারসংযোগ?
আমরা যদি নিপা ভাইরাসের আগের ঘটনাগুলি দেখি, আমরা দেখতে পাব যে এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র কেরালায় রিপোর্ট করা হয়েছে। কেন এমন ঘটনা? নিপা ভাইরাস আবিষ্কারকারী অধ্যাপক স্টিফেন লুবি। অধ্যাপক লুবি, যিনি গত ১৫ বছর ধরে নিপা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছেন, বলেছেন যে নিপা ভাইরাস দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া বড় আকারের বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই বাদুড়কে ফ্রুট ব্যাট বলা হয় কারণ এটি ফলের রস চুষে খায়। এই বাদুড়গুলো নিপা ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে। কেরলে এদের সংখ্যা বেশি। এছাড়া ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায়ও এদের দেখা মেলে।
বাদুড়কেনসংক্রমিতহয়না?
অধ্যাপক লুবি বলেন, এর কারণ বাদুড় মধ্যে পাওয়া বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডিগুলি বাদুড়ের জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হিসাবে কাজ করে, ফলস্বরূপ ভাইরাসটি তাদের দেহে উপস্থিত থাকে, কিন্তু তাদের সংক্রমিত করতে পারেনা। এই ভাইরাস বাদুড়ের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এছাড়া বাদুড়ের মল ও প্রস্রাবের মাধ্যমেও নিপা ভাইরাস মানুষের শরীরে পৌঁছাতে পারে।
কোন লক্ষণগুলি নজর রাখা দরকার এবং কীভাবে এড়ানো যায়?
নিপা ভাইরাস সংক্রমণ সহজেই একজন থেকে অন্য জনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সতর্ক থাকা দরকার। সংক্রমণের পর রোগীদের মধ্যে অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা। উপসর্গ ২ সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। এমনটা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত দরকার।
সংক্রমণনিশ্চিতকরতেসেরোলজি, সিরামনিউট্রালাইজেশনটেস্ট, হিস্টোপ্যাথলজি, পিসিআর এবং ভাইরাস আইসোলেশন এবং এলিসা পরীক্ষা করা হয়। ঝুঁকি কমাতে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অথবা পাখি দ্বারা আঁচড় দেওয়া ফল খাওয়া এড়িয়ে চলুন। জ্বর হলে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান।