নজিরবিহীন পদক্ষেপ! রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে দিতে বেনজির পদক্ষেপ বামশাসিত কেরল সরকারের। রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদ থেকে রাজ্যপালকে অপসারণের জন্য বিধানসভায় বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধনী) বিল পাশ করিয়ে নিল কেরল সরকার। যদিও বিরোধী ইউডিএফ মঙ্গলবার কেরল বিধানসভার এদিনের অধিবেশন বয়কট করেছে। রাজ্য সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে এই তৎপরতা নিয়ে তাঁদের কোনও পরামর্শ নেয়নি বলে অভিযোগ করে এদিনের অধিবেশন বয়কট করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ।
রাজ্য-রাজ্যপাল বেনজির সংঘাত কেরলে। কেরলের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদ থেকে রাজ্যপালকে অপসারণের বিল পাশ করিয়ে নিল পিনারাই বিজয়নের সরকার। রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে এবার থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধনী) বিল পাশ করিয়েছে কেরল সরকার। এদিন শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল এই সংস্কারের বিল পাশের কথা জানিয়েছেন কেরল বিধানসভার অধ্যক্ষ এএন শ্যামসির।
মঙ্গলবার কেরল বিধানসভায় এই বিলটি নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্যের পদ থেকে রাজ্যপালকে অপসারণের বিরোধিতা করেনি। তবে তাঁদের যুক্তি, এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও কেরল হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে থেকে কাউকে নির্বাচন করা উচিত ছিল। বিরোধী ইউডিএফ-এর পরামর্শ ছিল, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা করে আচার্য থাকার দরকার নেই। বরং নির্বাচন প্যানেলে মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা (এলওপি) এবং কেরল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির থাকা উচিত।
আরও পড়ুন- এজেন্সি তোপে বিজেপিকে তুলোধনা, ‘বাংলা পারলে মেঘালয় কেন নয়’, সুর চড়ালেন অভিষেক
এদিন বিধানসভায় ইউডিএফ শিবিরের এই পরামর্শের ব্যাপারে রাজ্যের আইনমন্ত্রী পি রাজীব জানান, একজন বিচারক নির্বাচন প্যানেলের অংশ হতে পারেন না। এক্ষেত্রে অধ্যক্ষ একজন ভালো বিকল্প হতে পারেন। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ''একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন না।''
এদিন, রাজ্য সরকারের এই বিল পাশ করানো নিয়ে আশঙ্কার আঁচ পাচ্ছে বিরোধী ইউডিএফ।
বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, ''রাজ্য সরকার তাঁদের পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ করে কেরালার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে কমিউনিস্ট বা মার্কসবাদী কেন্দ্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে।'' এদিন এই অভিযোগ তুলেই বিধানসভার অধিবেশন বয়কট করেছেন ইউডিএফ বিধায়করা। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে জগদীপ ধনকড় রাজ্যপাল থাকাকালীনও তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের সংঘাত চরমে পৌঁছেছিল। কেরলের মতোই এই একই অবস্থানের পথে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একইভাবে তামিলনাড়ুতেও মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গে সেরাজ্যের রাজ্যপালের সম্পর্ক দারুণ তিক্ততার জায়গায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন- ‘বাংলায় ক্ষমতার অপব্যবহার, যা খুশি তাই করছে BJP’, শিলঙে সোচ্চার মমতা
কেরলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যপাল আরিফ মোহম্মদ খান এবং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমেই চরম আকার নিয়েছে। একাধিক ক্ষেত্রে রাজ্যকে তুলোধনা করে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে রাজ্যপালকে। মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যপালের সমালোচনা করে বারবার সরব হয়েছেন। এই আবহেই এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদ থেকে রাজ্যপালকে পাকাপাকিভাবে সরানোর নজিরবিহীন পদক্ষেপ করল কেরলের বাম সরকার।