অফশোর কেলেঙ্কারি. সুইস লিক, পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসের পর ফের বিপুল অঙ্কের টাকার একগুচ্ছ ‘সন্দেহজনক’ আর্থিক লেনদেনের পর্দা ফাঁস। নেপথ্যে, ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট এবং মার্কিন সংবাদ সংস্থা বাজফিডের সহযোগিতায় দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। রিপোর্টে উঠে এসেছে একাধিক ভারতীয় ধনকুবের এবং সংস্থার নাম। আর তারপরই নড়েচড়ে বসেছে এ দেশের প্রশাসন। কালো টাকার ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) প্রধান জানিয়েছেন, ফিনসেন রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর তা কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড ও অর্থমন্ত্রকের নজরে আনা হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখিত বিষয় নিয়ে দ্রুত আলোচনার জন্য প্যানেল বৈঠকের আহ্বান করবে।
সিটের প্রধান তথা সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এন বি শাহ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েরছেন, ফিনসেন রিপোর্টে যেসব ভারতীয় ব্যক্তি এবং সংস্থার নাম উঠে এসেছে তা নিয়ে সোমবার দুপুরেই তিনি অর্থমন্ত্রকের রাজস্ব বিভাগের শীর্ষ আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সিট প্রধান বিচারপতি শাহের কথায়, 'আমেদাবাদে সিট আলোচনার জন্য বৈঠকের আহ্বান জানাবে, তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কিছুটা সময় দেওয়া প্রয়োজন।'
সিটের সদস্য হিসাবে কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড, ইডি, সিবিআই, আরবিআই সহ এই ইস্যুতে যুক্ত অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদেরও ওই বৈঠক সমন্ধে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এন বি শাহ। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়ে প্রাথমিকভাবে সব দিক খতিয়ে দেখার পরই সিট পরবর্তী পদক্ষেপ করবে বলে জানানো হয়েছে।
সন্দেহজনক লেনদেনের ফিনসেন রিপোর্টে যেসব ভারতীয় ব্যক্তি ও সংস্থার নাম উঠে এসেছে কেবল তাদের নিয়েই সিট পদক্ষেপ করবে বলে স্পষ্ট করেছেন কলো টাকা ইস্যুতে সিটের ভাইস চেয়ারম্যান অরিজিৎ পাসায়েত।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই কালো টাকা উদ্ধারে ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ওই বছরই মে মাসে কালো টাকা ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিট গঠন করা হয়।
এরমধ্যেই ইডি-র ডিরেক্টার এস কে মিশ্রা ফিনসেন রিপোর্ট নিয়ে মুখ খুলেছেন। জানিয়েছেন, 'সন্দেবজনক লেমনদেন নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার তদন্তমূলক প্রতিবেদন ও তাতে ভারতীয় সংস্থা-ব্যক্তিদের যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে তা নজরে রয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, ওগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলার আমরা তদন্ত করছি। ব্যাঙ্কিং লেনদেনের মাধ্যমে কিছু নতুন বিষয়ও সামনে আসতে পারে।'
প্রায় হাজার দু’য়েক নথির ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে রহস্য উদ্ঘাটন করেছে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নজরদারি সংস্থা ফিনান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক (ফিনসেন) এবং রিপোর্টের নামও দেওয়া হয়েছে ‘ফিনসেন ফাইলস্’। বিগত তিন মাস ধরে ওই সমস্ত সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনর নথি (সাসপিসিয়াস অ্যাকটিভিটি রিপোর্টস বা এসএআর) সংক্রান্ত রিপোর্টে নজর রেখেছিল সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’।
অধিকাংশ ‘সন্দেহজনক’ আর্থিক লেনদেনে ভারতের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, কোটাক মহিন্দ্রা, এইচডিএফসি, কনাড়া ব্যাঙ্ক, অন্ডাসইনড ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদার নাম উঠে এসেছে। এছাড়াও নাম রয়েছে ডয়সে ব্যাঙ্ক, স্ট্যানডার্ড চাটার্ড, সিটি ব্যাঙ্ক, জেপি মরগ্যানের। এসএআর রিপোর্ট বলছে, কীভাবে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদরা কর ফাঁকি দেন এবং বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করেন! ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’–র তদন্তমূলক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভারতীয় বংশদ্ভুত হীরে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রথমসারির স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থা, ঋণ খেলাপি স্টিল সংস্থা সহ আর্থিক অপরাধে যুক্ত বহু ব্যক্তি বা সংস্থার নাম উঠে এসেছে ফিনসেন পেপারে। আইপিএল–এর একটি টিমের স্পনসরের নামও তালিকায় রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, টাকা নেওয়া বা পাঠানোর জন্য ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির অভ্যন্তরীণ শাখাগুলিকে ব্যবহার করা হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যাঙ্কের বিদেশি শাখাগুলিকেও কাজে লাগিয়ে আর্থিক লেনদেন চালানো হয়েছে। এসএআর রিপোর্ট বলছে, শুধু ভারত থেকেই ৩,০২১টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন