চরিত্র বদল হয়েছে তালিবানদের। এখন এই জেহাদি সংগঠন আগের থেকে উদার। নারীদের সরকারে অংশগ্রহণের কথা বলেছে। কিন্তু, তালিবানিরাজ কায়েম হতে প্রাণভয়ে এ দেশে আসা আফগান উদ্বাস্তুরা তালিবানদের কথা শুনলেই শিউড়ে উঠছেন। বিশেষত মহিলারা। তালিবানদের আশ্বাস আসলে যে ভুয়ো উদ্বাস্তুদের কথায় বারে বারে তা ফুটে বেরচ্ছে। তালিবান নিমর্মতার সামনে নিজের সন্তানের ক্ষতিসাধনও বাধ মানে না।
বছর ৩২-য়ের খাতেরা হাসমি। তালিবান অত্যাচারের এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। বর্তমানে খাতেরা নিজের স্বামীর সঙ্গে থাকেন দিল্লির লাজপত নগরে। সেখানে রাষ্ট্রসংঘের উদ্বাস্তু কমিশনের দফতরের সামনে হাজার হাজার উদ্বাস্তু আফগানদের ভিড়েই এক কোণে দাঁড়িয়েছিলেন ওই মহিলা। তালিবানদের নাম উঠতেই জ্ঞান হারান সে। পরে খাতেরা হাসমি তাঁর উপর তালিবান অত্যাচারের করুণ কাহিনী তুলে ধরেন। জানান, ২০২০ সালের ৭ জুন এক বিভৎস দিন। তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বার সেদিন রেহাই মেলেনি। গজনি পুলিশে কাজ করার অপরাধে সেদিনই খাতেরার চোখ দু'টি উপরে নিয়েছিল জেহাদিরা। তালিবানরা বলেছিল, মহিলা হয়ে পুলিশে কাজ, অন্যদিকে পর পুরুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলা শরিয়াত বিরোধী।
এখানেই শেষ নয়, নির্মতার পিছনে রয়েছে আরও এক কাহিনী। যা আরও ভয়ঙ্কর। মেয়ের উপর এই অত্যাচারের অধিকার তালিবানদের দিয়েছিল খাতেরার বাবা। এমনটাই বিশ্বাস খাতেরা হাসমি ও তাঁর স্বীমার। এক সময়ে যে মেয়ে আইন রক্ষা করতেন, আজ ভিন দেশে এসে তাঁর দু'চোখে অন্ধকার। মনজুড়ে গভীর হাহাকার। তবে, তালিবদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এখনও দৃঢ় মানসিকতা রয়েছে খাতেরার। বলেছিলেন, "আমি চাই না ওরা আফগানিস্তানে রাজ করুন। আমার সন্তানদের এই পরিণতি আমি মেনে নেব না। আমি দেশে ফিরতে চাই। চাই ওদের বিরুদ্ধে লড়তে।"
তালিবানদের অত্যাচরের পর সে দেশেই চোখের চিকিৎসা করিয়েছিলেন খাতেরা। কিন্তু চোখ ভালো হয়নি। ছিল প্রাণ ভয়ও। ফলে গত নভেম্বরে ভারতে আসেন খাতেরা ও তাঁর স্বামী। জানুয়ারিতে এখানেই জন্মদেন ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের। বাকি পাঁচ সন্তান এখনও রয়েছে গজনিতে। তালিবান আমলে আপাতত তাঁদের পরিণতির কথা ভেবেই শিউড়ে উঠছেন এই জননী। প্রাণ দেশে ফিরতে চাইলেও সে যে অসম্ভব- তা ভেবেই ডুকরে কেঁদে উঠছেন খাতেরা। তাঁর কথায়, "আমি মনে করি এটা কোনও জীবন নয়, ফোনে আমার বাকি তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা ভয়ে কাঁদছে। বলছে আমাদের ফিরে যেতে। ওদের রক্ষা করতে। কিন্তু আমরা এতদূর থেকে কী করব? আগে আমার মা, বোনেরা ওদের দেখভাল করত, কিন্তু এখন পরিস্থিতি সেরকম নেই।"
মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুসারে, চোখ উপড়ে নেওয়ার পাশাপাশি খাতেরা হাসমির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধর করেছিল তালিবানরা। ছিল গুলির ক্ষতও। সরকারি কাজ করার সুবাদে কিছু আফগান অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসাবে এখনও পাচ্ছেন এই মহিলা। কিন্তু তালিবানদের আসার পর সেটাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। তখন চলবে কীভাবে? বিদেশে বসে সে কথাও ভাবাচ্ছে খাতেরাকে।
দিন কয়েক আগেই মিলেছে রাষ্ট্রসংঘের উদ্বাস্তু কার্ড। এখন ভারত ছেড়ে জীবন ধারণের জন্য অন্য কোনও আরও উন্নত দেশে যেতে মুখিয়ে রয়েছেন খাতেরা হাসমি ও তাঁর স্বামী নবি। তবে, বুকজুড়ে নিজভূমি ছাড়ার হাহাকার কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাঁকে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন