বিয়ের পরও কেন লিভ-ইন পরিচয়? ভিনধর্মে বিয়ের জেরেই নিক্কির এই মর্মান্তিক পরিণতি? নিক্কির মৃত্যুর পর উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। এর মাঝেই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। গাড়ি থেকে ঠেলে ফেলে দিয়ে নিক্কিকে কুন করতে চেয়েছিল সাহিল। নিখুঁত পরিকল্পনা ছিল তার। নিক্কির বুদ্ধিমত্তার জেরেই তা করতে না পেরে গাড়িতে থাকা ডেটা কেবিল পেঁচিয়েই নিক্কিকে খুন করে দেহ লোপাট করার করতেই ধাবার ফ্রিজে নিক্কির মৃতদেহ লুকিয়ে রাখে সাহিল। পুলিশি জেরায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
দিল্লির নারকীয় হত্যা মামলায় রোজই সামনে উঠে আসছে একাধিক নয়া তথ্য। দিল্লি পুলিশ তদন্তে জানতে পারে অভিযুক্ত, সাহিল গেহলট (২৪), নিক্কির লিভ-ইন পার্টনারই ছিলেন না, তিনি নিক্কির স্বামীও ছিলেন। বাড়ির অমতে বছর তিনেক আগেই তারা ২ জন একটি মন্দিরে বিয়ে করেন। বিয়ের কথা পরিবারকে কেউই জানান নি।
সূত্রের খবর, দুজনেই তাদের বিয়ের খবর পরিবারের লোকেদের থেকে আড়াল করে রেখেছিলেন। এমনকী পরিবারের সদস্যদের বিয়েতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অবশেষে যখন সাহিলের পরিবার এই বিয়ের কথা জানতে পেরেছিল, তারা এই সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিল কারণ তারা দুজন ভিন্ন সম্প্রদায়ের ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে এর পর থেকেই সাহিলকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে পরিবার উঠে পরে লাগে। সিনিয়র অফিসারদের মতে, সাহিলের বাবা অপরাধের কথা জানতেন। তার পরেও ছেলেকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন। ধৃত বাকীরা নিক্কির দেহ লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে বলে অভিযোগ।
২০২০ সালেই ভালবেসে বিয়ে করেন নিক্কি ও সাহিল। তদন্তে নেমে চোখ কপালে পুলিশের। তারপরই দুজন একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। সাহিলের পরিবার এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। ফলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অন্যত্র সাহিলের বিয়ে ঠিক করেন। ১০ ফেরুয়ারি নিক্কিকে ডেটা কেবিলের তার দিয়ে পেঁচিয়ে হত্যা করে পরিবারের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করেন সাহিল। এমনটাই উঠে এসেছে তদন্তে। সব দেখে শুনে বুক কেঁপে উঠেছে দিল্লি পুলিশের দুঁদে অফিসারদেরও
লিভ-ইনে থাকত না নিক্কি! পরিবারের তরফে সেকথা আগেই জানানো হয়েছে।সাহিল যে নিক্কিকে খুন করেছে সেকথা জানত সাহিলের বাবা। আর তা জানার পরও ছেলেকে অন্য মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিল বাবা। তদন্তে নেমে পুলিশ এমনটাই জানতে পেরেছে সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে সাহিলের বাবাকেও। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে ২০২০ সালে সাহিল এবং নিক্কি একটি মন্দিরে বিয়েও করেন। উদ্ধার করা হয়েছে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেটও।
আরও পড়ুন : < আইফোন হাতে পেতে ডেলিভারি বয়কে নারকীয় খুন, পুড়িয়ে দেহ লোপাটের চেষ্টা…! >
দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ সাহিলের বাবা বীরেন্দ্র সিং, তার দুই ভাই এবং তার দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বীরেন্দ্র সিংয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে ১০ ফেরুয়ারি সাহিল যে অন্য কাউকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন সেকথা জানতে পারেন নিক্কি। তা থেকেই শুরু বচসা। এরপরই নিখুঁত পরিকল্পনা করে ‘রুদ্ধশ্বাস খুন’।
ফ্রিজে প্রেমিকার দেহ লুকিয়ে রেখেই অন্য মহিলাকে বিয়ে করে বন্ধুদের সঙ্গে দেদার সেলিব্রেশনে মেতেছিলেন সাহিল গেহলট। রাজধানীর বুক কাঁপিয়ে দিয়েছিল কিছুদিন আগের শ্রদ্ধা ওয়ালকরের খুনের ঘটনা। প্রেমিকের হাতে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছিল তরতাজা এক তরুণীকে। খুনের পর শ্রদ্ধার দেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে ফ্রিজে লুকিয়ে রাখার পর জঙ্গলে ফেলে দিতে গিয়ে শেষমেশ ধরা পড়েছিল তাঁর প্রেমিক তথা অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা। আর তার রেশ কাটতেই না কাটতেই রাজধানীর নজফগড়ের এক ধাবার ফ্রিজারে উদ্ধার হয়েছে ২৪ বছরের নিক্কি যাদবের দেহ।
দিল্লি পুলিশ দাবি করেছে সাহিল জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বীকার করেছেন নিক্কির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা। এমনকি নিক্কি তাকে বিয়ের জন্য চাপও দেন। কিন্তু তার পরিবার অন্য একজনের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে যে সে তার গাড়ির ভিতরে থাকা একটি ডাটা ক্যাবল দিয়ে নিক্কিকে শ্বাসরোধ করে খুন করে দেহ ফ্রিজে ভরে রাখে সাহিল। মহিলা কমিশন রিপোর্ট তলব করেছে
এই ঘটনায় দিল্লি পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। কমিশন এই বিষয়ে দিল্লি পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা টুইট করেছেন যে কেউ কীভাবে এত হৃদয়হীন হতে পারে? সঙ্গীকে শুধু খুনই করেননি, একই দিনে অন্য মেয়েকেও বিয়েও করেন।