আকাশের দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে রয়েছেন তিনি। তাঁর বয়স ৬২। চোখেমুখে একরাশ আতঙ্ক যেন গ্রাস করেছে। "হে ঈশ্বর, বৃষ্টিটাও হচ্ছে না," একথা বলার পরই ঠোঁট কাঁপল তাঁর। ফের বলে উঠলেন, "বৃষ্টিটা হলেও..." আবার থামল বৃদ্ধের ভাঙা কন্ঠস্বর।
এই মুহূর্তে বোধহয় বাগরি মার্কেট লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা ইন্দ্র দেবের নামই জপ করছেন। যেমন অগ্নিবিধ্বস্ত বাগরি মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় মেহতা বিল্ডিংয়ের ছাদের একচিলতে ঘরের বাসিন্দা ডি বি থাপা, যিনি আগুন জ্বালা আর সইতে পারছেন না। ঘরের বারান্দায় বাগরি মার্কেট থেকে অনর্গল ধোঁয়া সহ্য করতে করতে আাকাশের পানে চেয়ে রয়েছেন, যদি বারিধারা নেমে আসে।
ছত্রিশ ঘণ্টারও বেশি সময় পার৷ এখনও জ্বলছে বাগরি। চারপাশের আকাশে শুধুই ধোঁয়া আর ধোঁয়া। দমকলবাহিনী যে অগ্নিপরীক্ষায় ডাহা ফেল করেছে, একথা মেনেছেন ওই বৃদ্ধও। আফশোসের সুরে বলছেন, "দমকল তো কিস্যু পারছে না। কী হবে আর। সব পুড়ে গেল। কতজন যে কান্নাকাটি করছেন।"
সেই অভিশপ্ত রাত থেকে দু'চোখের পাতা এক করতে পারেননি থাপা। উদ্বেগের সুরে বললেন, "শনিবার রাত আড়াইটে থেকে আর ঘুম হয়নি। কাল রাতেও ঘুমোতে পারিনি। এখনও আগুন জ্বলছে। চারদিকে কত ধোঁয়া। কখনও যদি আমাদের বিল্ডিংয়ে ধরে যায়, এই ভেবে আতঙ্ক লাগছে।"
সেদিন কখন টের পেলেন যে আগুন লেগেছে? ভাঙা গলায় বৃদ্ধ বললেন, "রাত তখম আড়াইটে হবে। হঠাং আওয়াজে ঘুম ভাঙল। দেখলাম আগুন লেগেছে। চারদিক থেকে আগুন ধরে যায়। আগেও অনেক আগুন দেখেছি, এরকম ভয়ঙ্কর আগুন দেখিনি কখনও।" তিনি আরও বললেন, "বারান্দা থেকে জল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনও লাভ হল না।"
মেহতা বিল্ডিংয়ের বারান্দা থেকে অগ্নিকাণ্ড। ছবি: সৌরদীপ সামন্ত
বাপের বাড়ির লাগোয়া বিল্ডিংয়ে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন ওই বৃদ্ধের এক মেয়েও। তাঁর চোখেমুখেও সেই আতঙ্ক। তাঁর কথায়, "খবর পেয়েই ছুটে এসেছি। তারপর তো এসে দেখলাম সব।"
মেহতার পড়শি বিল্ডিং বাগরি। মেহতা বিল্ডিংয়ের ছাদেও সাপের মতো শুয়ে রয়েছে দমকলের হোস পাইপ। আশপাশের মানুষরা অগ্নিবিধ্বস্ত বাগরিকে একবার চোখের দেখা দেখতে ভিড় করেছেন মেহতা বিল্ডিংয়ের ছাদে। সেই ছাদের এক কোণায় এক ছেলে, নাতি, পুত্রবধূকে নিয়ে সংসার থাপার। একটাই দুশ্চিন্তা, বাগরির আগুন তাঁদের সংসারও গ্রাস করবে না তো?