"এখনও আগুন নেভেনি?" অগ্নিবিধ্বস্ত বাগরির চেহারা মঙ্গলবার দেখতে এসে বিস্ময়ের সুরে এমন প্রশ্নই নিজের মনে আওড়ালেন এক কৌতূহলী পথচারী। তিন রাত ধরে বাগরির ধোঁয়া সহ্য করে চলেছে শহর কলকাতার এই এলাকা। কিন্তু সেই কালো ধোঁয়াকে কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না। এখনও আগুন জ্বালায় জ্বলছে বাগরি।
প্রায় ৬০ ঘণ্টা পরেও বাগরি মার্কেটের আগুন নিভল না। এখনও বাগরির জানলা দিয়ে অনর্গল ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এ আগুন নিভবে কবে? জবাবে তেমন কোনও সদুত্তর মেলেনি দমকলের তরফে। এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, "এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে আমাদের কর্মীরা সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছেন।" দমকল বাহিনীর ডিজি আরও বললেন, "ভিতরে প্রচণ্ড তাপ রয়েছে। আমরা মার্কেটের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় ঢুকতে পেরেছি।"
বাগরি অগ্নিকাণ্ডে কেন খোলা যায়নি হাইড্রোলিক ল্যাডার? বললেন ফায়ার সার্ভিস , ডিরেক্টর জেনারেল জগমোহন#BagriMarketFire pic.twitter.com/bD77OhkKuz
— IE Bangla (@ieBangla) September 18, 2018
বাগরির আগুন আয়ত্তে আনতে কেন দমকল হাইড্রোলিক ল্যাডার ব্যবহার করল না, তা নিয়ে এদিন মুখ খোলেন ডিজি। তিনি বলেন, "হাইড্রোলিক ল্যাডার ব্যবহার করতে গেলে ৪৫ মিনিট ফায়ার অপারেশন বন্ধ রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে সেদিন তা ব্যবহার করা যেত না।" এদিন বাগরি অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কয়েকজনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলেও জানিয়েছেন ডিজি।
বাগরি বিল্ডিংয়ের ভেতরের অবস্থা। এখনও চলছে আগুন নেভানোর কাজ। #BagriMarketFire pic.twitter.com/l2Bvc54OIK
— IE Bangla (@ieBangla) September 18, 2018
গতকাল থেকেই বাগরির জানলা ভেঙে, গ্রিল কেটে ভিতরে ঢোকেন দমকলকর্মীরা। বাগরির ভিতরে ঢোকেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরাও। এদিনও বাগরির বিভিন্ন জানলা গ্যাসকাটার দিয়ে কেটে ভিতরে ঢুকেছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা। বাগরির ভিতরে ঠিক কী অবস্থা? এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর এক কর্মী জানালেন, "ভিতরে এখনও অনেক জায়গায় পকেট ফায়ার রয়েছে। আমরা শাটার কেটে ভিতরে ঢুকেছি। আজও ঢুকব। দমকল তো জল দিচ্ছেই।" দমকলের ডিজির মতো বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ওই কর্মীও বললেন, "ভিতরে খুব তাপ।"
জতুগৃহে পরিণত হওয়া বাগরির দোকানে বেঁচে থাকা জিনিসপত্র বের করার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা#BagriMarketFire pic.twitter.com/2KOzvOVn8j
— IE Bangla (@ieBangla) September 18, 2018
গতরাত থেকেই আশপাশের বিল্ডিং থেকে বাগরির পোড়া দেওয়ালে জল দিয়ে কুলিং করা হচ্ছে। এদিনও আশপাশের বিল্ডিং থেকে জল দেওয়া হচ্ছে বাগরির দেওয়ালে। মঙ্গলবারও বাগরির জানলা দিয়ে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে অবিরাম। এক পুলিশকর্মী অবশ্য বললেন, "জল তো পৌঁছচ্ছেই না। এখনও ভিতরে জ্বলছে। ছাদে, ভিতরে কাজ চলছে। কিন্তু যেখানে ধরুন আগুন, সেখান পর্যন্ত জল যাচ্ছে না।"
কী বুঝছেন, আর কতক্ষণ লাগবে? জবাবে এক দমকলকর্মী বললেন, "টাইম লাগবে।" আর কতক্ষণ পর আগুন-ধোঁয়া থেকে রেহাই পাবে বাগরি, সেদিকেই তাকিয়ে শহর কলকাতা।
অন্যদিকে বাগরি দর্শন এদিনও চলছে। যদিও অগ্নিবিধ্বস্ত বাগরিকে দেখার জন্য উৎসাহী মানুষের ভিড় গত দু'একদিনের থেকে কমেছে এদিন। কেউ কেউ আবার বিস্ময়ের চোখে চেয়ে বাগরির সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। গতকালের মতো এদিনও দেখা গিয়েছে কয়েকজনকে, যাঁরা ভিডিও কল করে দূরের স্বজনকে বাগরির অগ্নিলীলা দেখাচ্ছেন। অনেকে আবার চেনেন না বাগরি মার্কেট কোনটা, দুর্ঘটনাস্থলে এসে একে ওকে জিজ্ঞেস করে পোড়া বাগরি চাক্ষুষ করছেন।