মাঝেরহাট ব্রিজ কাণ্ডের পর আমরা সরেজমিনে শহরের বাকি ব্রিজ এবং ফ্লাইওভার দেখতে বেরিয়েছিলাম। খুব একটা বেশি কিছু আশা করি নি, কিন্তু যা দেখলাম, তাতে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। একের পর এক সেতু দেখার পর আতঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। অাতঙ্ক আপনাকে তাড়া করবেই। এই প্রতিবেদনের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং ছবি তুলেছেন শশী ঘোষ।
বালিগঞ্জ রোড ওভারব্রিজ
ফলক বলছে, ১৯৭৮ সালে তৈরি হয়েছে এই সেতু। বর্তমানে নিত্যদিন এই ব্রিজের চাঙড় ভেঙে খুচরো জখম হচ্ছেন মানুষ। দুদিন আগেই এক ব্যক্তির মাথা ফেটে গিয়েছে, জানালেন স্থানীয়রা। এখনও বেশ কিছু জায়গায় এমন অবস্থা যে যখন তখন চাঙড় খসে পড়তে পারে। যাঁরা ওই ব্রিজের নীচ দিয়ে যাতাযাত করেন, তাঁরা একটু সাবধানেই যান। নীচের দিকে নয়, ওপরে তাকান, এই বিজ্ঞাপনে এলাকা ভরে গেলে কেউ অবাক হবেন না। ব্রিজের সিলিং দেখে মনে হল, মাথায় চাঙড় না ভেঙে পড়াটাই বেশি আশ্চর্যের।
বালিগঞ্জ ব্রিজের অবস্থার কথা বলছেন এক নিত্যযাত্রী#bridge pic.twitter.com/glHvZ7mXEV
— IE Bangla (@ieBangla) September 6, 2018
লেক গার্ডেন্স ফ্লাইওভার
একটি গাছ, একটি প্রাণ। গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান। সভ্যতার অগ্রগতি ঘটাতে গিয়ে রাজ্য জুড়ে গাছ কাটার প্রতিযোগিতা চলছে। তবে কলকাতার সেতুগুলো দেখলে কখনও আপনার মনে হতে পারে সেতুতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে দেশে বা বিশ্বে প্রথম স্থান পেতে পারে এই শহর। এই শহরে নতুন ও পুরনো এমন কোনও সেতু নেই যার গায়ে গাছ নেই। লতানো থেকে ছোট, বড়, এমনকী বৃক্ষে পরিণত হয়ে গিয়েছে গাছগুলো। কিন্তু কোনও হেলদোল নেই কর্তৃপক্ষের। শহরে অক্সিজেনের বড্ড অভাব! অতএব সেতুতে গাছ বড় হচ্ছে হোক। ফাটল ধরে দুর্ঘটনা ঘটলে কিছু মানুষের মৃত্যু হবে, এই তো? লেক গার্ডেন্সে সেতু যে শহরে বৃক্ষ প্রতিযোগিতায় প্রথম হবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
ঢাকুরিয়া ব্রিজ
ইঁদুরের গর্তে বেসামাল অবস্থা হয়েছিল ঢাকুরিয়া ব্রিজের। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে তা ভাবার কারণ নেই মোটেই। বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধি প্রত্যক্ষ করলেন সেতুর তলায় ইঁদুরের অসংখ্য গহ্বর। শয়ে শয়ে গর্ত রয়েছে ধেড়ে ইঁদুরের। এর আগে গর্ত বোজানোর কাজে কী ধরনের গাফিলতি হয়েছে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে একটু দেখলেই। যখন তখন বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে এই ইঁদুরের গর্ত থেকেই। তবু কোনও হুঁশ নেই কারোর। ব্রিজের যত্রতত্র চাঙড় ভেঙে পড়া, চলটা উঠে যাওয়া তো রয়েইছে। কোথাও জয়েন্ট বরাবর ফাটল দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া জং ধরা লোহার রড রয়েছে সেতুটির নানা জায়গায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব প্রতি পদক্ষেপে।
মানিকতলা সেতু
মানিকতলায় ব্রিজের নীচের মাঝ বরাবর বড়সড় ফাটল। খালের ওপর এই সেতু নির্মান করা হযেছিল ১৯২৮ সালে। এই সেতুতে এখনও ট্রাম চলে। তখন ব্রিজের কম্পন খুব ভালরকম উপলব্ধি হয়। ভারী যান চলাচল করে নিয়মিত। ট্রাফিক জ্যাম হলে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। ব্রিজের বহণ ক্ষমতা এখন কত তা জানা নেই কারও। মাঝেরহাটের ক্ষেত্রেও তা জানতেন না কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে তার ওজন বওয়ার ক্ষমতা পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শেষ কবে এই সেতুটির মেরামতি হয়েছে তা মনে নেই। তবে এর মেরামতির দিকে নজর না দিলে সমূহ বিপদ রযেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শহরের মানিকতলা ব্রিজের হালহকিকত #bridge pic.twitter.com/DErXMS7hap
— IE Bangla (@ieBangla) September 6, 2018
চিংড়িঘাটা উড়ালপুল
চিংড়িঘাটা উড়ালপুল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সেতু দিয়ে সেক্টর ফাইভ ও নিউটাউন সহজে যাওয়া যায়। ওপরের রেলিং প্লাই দিয়ে ঢাকা। সেতুতে প্লাই-বোর্ড। নীল সাদা রঙ বেশ লাগছে। সেতুর নীচে একটি পরিবার বাস করছেন ২০০৫ সাল থেকে। মাঝেরহাট সেতু ভেঙে যাওযার পরেও এই বাসস্থান তাঁরা ছেড়ে যাননি। এই বাড়িতে দুদন্ড থাকলে যে কারও প্রাণে ধড়ফড়ানি শুরু হতে বাধ্য। ওপরে গাড়ি চললেই মনে হচ্ছে এখনই চাপা পড়বে। প্রতি মুহূর্তে আতঙ্ক নিয়ে থাকছেন পরিবারটি। পরিবারের সদস্য সোমা দাস বলেন, "কোথায় আবার যাব? এখানেই থাকব, যা হওযার হবে।" এই সেতুর নানা জায়গায় যেসব ফাটল ছিল তা কোনওরমে জোড়াতাপ্পি দেওয়া হয়েছে। সেতুতে বাস চললেও ট্রাক চলাচল করে না। এটাই যা রক্ষে।
নিউ টাউন ব্রিজ
সল্টলেক থেকে নিউ টাউনের সংযোগকারী নিউ টাউন সেতু। আপাতদৃষ্টিতে সেতু দেখলে বোঝার উপায় নেই। আধুনিক শহরের উপযুক্ত বলেই মনে হবে। সেতু থেকে আশপাশে অট্টলিকা দেখতে ভালই লাগে। কিন্তু এই সেতুর পিলারেও গলদ রয়েছে। এখন রঙ করার তোড়জোড় চলছে। অবশ্য রঙ করলে অনেক কিছু ঢাকা পড়ে যাবে। একটু খতিয়ে দেখলেই ফাঁকফোকর বেরিয়ে পড়বে। নীচের কিছু পিলারের ফাটল বেশ স্পষ্ট। তাছাড়া মনে হচ্ছে যেন সেতুর ওপরের দিকের চাপে কিছু জায়গা অনেকটা বেঁকে গিয়েছে। ছবিগুলো লক্ষ্য করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন।