বাবা হাসপাতালে ভর্তি। বাবাকে দেখতে সকালেই স্নান-খাওয়া করে শ্রীরামপুর থেকে হাওড়াগামী ট্রেনে ওঠেন পঞ্চানন দাস। ট্রেন যখন সবে উত্তরপাড়ায়। সেই আতঙ্কের ফোন আসে। তখন ঘড়িতে বাজে সাড়ে আটটা। "দাদা, বিশাল ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ফোনে এক ভদ্রলোক জানান যে, হাসপাতালে আগুন লেগেছে। আপনার বাবাকে সরানো হয়েছে," একরাশ চাপা আতঙ্কের সুরে বললেন পঞ্চাননবাবু।
"ফোনে এক ভদ্রলোক জানান যে, হাসপাতালে আগুন লেগেছে। আপনার বাবাকে সরানো হয়েছে..."#medicalcollege #KolkataMedicalCollege #Kolkatafire pic.twitter.com/yZ5ONjE6G5
— IE Bangla (@ieBangla) October 3, 2018
একইরকম আতঙ্কের ফোন পেয়ে দিন শুরু হয়েছে চণ্ডীতলা থানার বাসিন্দা বর্ণালী মণ্ডলের। শাশুড়ি সুষমা মণ্ডল কলকাতা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। আগুন লেগেছে, ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছুটে এসেছেন তিনি। হাসপাতালের মেঝেতে কোনওরকমে বসে ৭৫ বছর বয়সী সুষমাদেবী শুধু বলছিলেন, "বাড়ি যাব।" আগুন আতঙ্কে সুষমাদেবী নিজেই বেড ছেড়ে নেমে এসেছেন।
আগুন আতঙ্কের কথা জানাচ্ছেন রোগী এবং তাঁর পরিজন #medicalcollege #KolkataMedicalCollege @ieBangla pic.twitter.com/CJwAVGAijS
— IE Bangla (@ieBangla) October 3, 2018
এদিকে হাসপাতালের বেডে সবে ঘুম ভেঙেছিল হরিপালের বাসিন্দা মদনমোহন দে'র। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তিনি বললেন, "তখন সবে ঘুম ভেঙেছে। পোড়া পোড়া গন্ধ পেলাম। আয়ারা জানালেন যে, আগুন লেগেছে। তারপর আমাদের নামানো হয়।"
"তখন সবে ঘুম ভেঙেছে। পোড়া পোড়া গন্ধ পেলাম। আয়ারা জানালেন যে, আগুন লেগেছে। তারপর আমাদের নামানো হয়।"#medicalcollege #KolkataMedicalCollege #Kolkatafire pic.twitter.com/NVYCpb5V80
— IE Bangla (@ieBangla) October 3, 2018
অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের জেরে সরানোর সময় কয়েকজন রোগীর আঘাত লেগেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কয়েকজন রোগীর পরিজন। যেমন কলেজ স্ট্রিট এলাকার ফুল মহম্মদের আত্মীয়েরা বললেন, "বাবা হার্টের রোগী। বাবাকে টেনে হিঁচড়ে নামানো হয়েছে। আঘাত লেগেছে।" ৭০ বছর বয়সী ফুল মহম্মদের ছেলে ক্ষোভের সুরে বললেন, "এখানে এনে ফেলে রেখে দিয়েছে। কেউ সাহায্য করছে না। বলছে, অন্য হাসপাতালে নিয়ে চলে যান।"
"বাবা হার্টের রোগী। বাবাকে টেনে হিঁচড়ে নামানো হয়েছে। আঘাত লেগেছে।" #medicalcollege #KolkataMedicalCollege #Kolkatafire pic.twitter.com/TAbJzUR9MG
— IE Bangla (@ieBangla) October 3, 2018
পঞ্চানন বাবু বা বর্নালী দেবীর মতো ফোনে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাননি হাওড়ার বাউড়িয়ার বাসিন্দা কাকলি ধাড়া। হাসপাতালে স্বামীকে দেখতে নিয়মমাফিক এদিনও সকালে হাসপাতালে আসেন তিনি। মেডিক্যাল কলেজে ঢুকতেই আতঙ্ক গ্রাস করে তাঁকে। কাকলিদেবী বললেন, "এসে দেখি যে আগুন লেগেছে, সবাই ছোটাছুটি করছে। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে তো ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারপর যখন ঢুকলাম, তখন নিজে খুঁজে ওকে পেলাম।"
সুষমাদেবীর মতোই নিজে পায়ে হেঁটেই আগুন আতঙ্কে হাসপাতালের নীচে নেমে এসেছেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা শইদুল ইসলাম। তিনি বললেন, "যখন শুনলাম যে আগুন লেগেছে, পড়িমড়ি করে নেমে আসি। একটু তো অসুবিধা হচ্ছেই মেঝেতে বসে থাকতে।" অন্যদিকে, কলকাতা মেডিক্যালে যাঁদের পরিবার পরিজন অন্যান্য বিভাগে ভর্তি রয়েছেন, সেখানে আগুন লাগেনি ঠিকই, কিন্তু আতঙ্ক গ্রাস করেছে। ভাগ্নে বার্ন ইউনিটে ভর্তি। ভাগ্নের জন্য জোকা থেকে খাবার এনেছেন মামিমা প্রণতি ধাড়া। তিনি বললেন, "সকাল থেকে এসেছি, এখনও ওর কাছে যেতে পারলাম না। সকালের খাবার, জানি না নষ্ট হয়ে গেলে কী হবে। ভয় তো লাগছেই। হাসপাতালে এসে জানলাম আগুন লেগেছে।" ডোমজুড়ের বাসিন্দা শিখা পাড়ুই বললেন, "বাবার ক্যান্সার হয়েছে। আজ ভর্তি করাতে এসেছি। কিন্তু এ ঘটনার জন্য দেরি হচ্ছে।"
যেসব রোগীকে সরানো হয়েছে, তাঁদের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেয়। তাঁদের জন্য অবশ্য হাসপাতাল থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিম-পাউরুটি-কলা দেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, সব রোগীকেই নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।