ঘড়িতে তখন সকাল ৭.৪০। ওয়ার্ডে নাইট ডিউটি শেষ। তাই সেভাবে স্টাফ ছিল না কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এম সি এইচ ভবনের দোতলায়। তখনও আগের রাতে খাওয়া ঘুমের ওষুধের জের চোখে হাসপাতালে ভর্তি ৬৭ বছরের ওয়াসিম আহমেদের, পেটে জল জমার কারণে যিনি দুদিন আগেই ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
বাথরুমে যাওয়ার জন্য বেড ছেড়ে উঠেছিলেন ওয়াসিম। হঠাৎ দেখেন মাথার কাছের জানালা দিয়ে গলগল করে ঢুকছে ধোঁয়া। তারপর কানে আসে হইহট্টগোল, "আগুন লেগেছে"। প্রথমে ভয় পেয়ে যান। তারপর দেখেন, সবার পরিবারের লোক নিজের নিজের রোগীকে নিয়ে নেমে যাচ্ছেন নীচে, দৌড়াদৌড়িতে অনেকে সিঁড়িতে পড়েও যাচ্ছিলেন বলে জানান তিনি।
ওয়াসিম বলেন, "হঠাৎ এক ওয়ার্ডের আধিকারিক এসে আমাকে বলে, 'কার জন্য অপেক্ষা করছেন? যান, নীচে নেমে যান'।" তখন তিনি কোনোরকমে ধরেবেঁধে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসার চেষ্টা করেন । কিন্তু ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান মাটিতে। ঘটনায় আঘাতও পান। পেটে জল জমার কারণে পেটের আয়তন স্বাভাবিকের থেকে তিনগুণ বেশী। সহজে হাঁটতে পারেন না। কোনো রকমে ধরে ধরে বাইরে আসতেই পরিবারের লোককে দেখতে পান। তারপর তাঁকে নিয়ে এসে রাখা হয় এম সি এইচ ভবনের ডান দিকের রাস্তায়, খোলা আকাশের নিচে। যেখানে বাকি রোগীদেরও রাখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: Kolkata Medical College fire: আগুন-আতঙ্কে কাবু রোগী থেকে পরিজন
তারপর খানিক পরে তাঁদেরকে একে একে নিয়ে যাওয়া হয় জরুরি বিভাগে। ওয়াসিম এক নার্সকে জানিয়েছিলেন তাঁর পেটে ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা সে সবের তোয়াক্কা না করে ওয়াসিমকে চাদরে মুড়ে নিয়ে যান জরুরি বিভাগের ভিতরে। আপাতত তাঁর ঠাঁই হয়েছে জরুরি বিভাগের লিফটের পাশের মেঝেতে। পরিবারের লোক জানিয়েছেন, এখনও চিকিৎসা শুরু হয়নি। আজ ওনার আল্ট্রাসোনোগ্রাফি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সেসবের কি হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
তবে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, "এই অচলাবস্থার মধ্যেই সাধ্যমত কাজ করছি আমরা। রোগীদের যাতে চিকিৎসার ত্রুটি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।"