দৃশ্য ১ - "ধুস, একটাও টয়লেট নেই", বলতে বলতে সেদিন চাঁদনি চক স্টেশনে মেট্রো থেকেই তড়িঘড়ি নেমে কার্যত দৌড় লাগিয়েছিলেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক। কোনওরকমে টিকিট সোয়াইপ করে মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোন তিনি।
দৃশ্য ২ - রবীন্দ্র সদন স্টেশনে এক শনিবারের সন্ধ্যে। ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ বমি করে ফেলল এক শিশু। ছেলের বমি দেখে ইতস্তত করছিলেন মাও। কোনওরকমে ছেলেকে কোলে করে নিয়ে মেট্রোর বাইরে বেরোলেন। হয়তো ভাবছিলেন, "যদি একটা ওয়াশরুম থাকত..."
মাঝেমধ্যেই এমন দৃশ্যের সাক্ষী হতে হয় কলকাতার লাইফলাইনকে। পাতালে গিয়েও প্রকৃতির ডাককে উপেক্ষা করার সামর্থ্য তো কারোরই নেই। কিন্তু মেট্রো স্টেশনে প্রকৃতি ডাকলে কী করবেন আপনি? এই সমস্যায় এবার সম্ভবত ইতি টানতে চলেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। পাতাল রেলের স্টেশনে এবার পাবলিক টয়লেট বসানোর ভাবনা নিয়েছে কলকাতা মেট্রো।
হ্যাঁ, আগামী দিনে কলকাতা মেট্রো স্টেশনেও থাকবে শৌচাগার। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে মেট্রো রেলের এক আধিকারিক বলেন, "কোথায় কোথায় বসানো সম্ভব তা দেখা হচ্ছে। তবে অবশ্যই এখন কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।"
আরও পড়ুন: কলকাতা মেট্রোয় বসছে ভার্চুয়াল গ্রসারি স্টোর?
শৌচাগারের মতো জরুরি সুবিধা কেন নেই কলকাতা মেট্রোয়, এ প্রশ্ন অনেকদিন ধরে অনেকেরই। এ ব্যাপারে মেট্রো রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার নিকাশীস্তর মেট্রোর গভীরতার নিরিখে উঁচু। ফলে কোনও বর্জ্য পদার্থই পাম্প করে বাইরে বের করা সম্ভব নয়। তবে মাটির তলায় যেসব স্টেশন রয়েছে, সেগুলোর উচ্চতা দেখা হচ্ছে। উচ্চতা খতিয়ে দেখেই বোঝা যাবে সেখানে পাবলিক টয়লেট বসানো যাবে কী না। অন্যদিকে মেট্রো রেল সূত্রে এও জানানো হয়েছে, যে মেট্রো স্টেশনের ১০০ মিটারের মধ্যে পুরসভার সুলভ শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে।
মেট্রো স্টেশনে শৌচাগার বসানো হচ্ছে শুনেই খুশি হয়েছেন অনেক যাত্রীই। হাওড়ার বাসিন্দা চন্দ্রিমা ঘোষ যেমন জানালেন, "মেট্রোয় শৌচাগার থাকলে তো খুব ভাল হয়। অনেকসময়ই বিভিন্ন সমস্যা হয়। শৌচাগার থাকলে সেসব সমস্যা অনেকটাই মিটবে।" মেট্রোর আরেক যাত্রী, দমদমে চিড়িয়া মোড়ের বাসিন্দা মৌসুমী চক্রবর্তী বললেন, "মেট্রোয় শৌচাগার দরকার কিনা, তা নিয়ে বহু বছর আগে একটা ক্যাম্পেন করা হয়। খুব দরকার শৌচাগারের। যিনি দমদম থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত যাচ্ছেন, তাঁর তো দরকার হতেই পারে। তাছাড়া যে কোনো কারওরই দরকার হতে পারে।"
মেট্রো স্টেশনে শৌচাগার হলে বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের খুব উপকার হবে বলে মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনার সন্দীপ দাস। তিনি বলেন, "শৌচাগার থাকলে তো খুবই ভাল। অনেকেরই সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের খুব সমস্যা হয় শৌচাগার না থাকায়।"
পাতালের স্টেশনগুলোতে শৌচাগার করা যায় কিনা এই মুহূর্তে ভাবনায় রয়েছেন কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেই ভাবনার বাস্তবায়ন হলে যে মেট্রো যাত্রীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন, তা বলাই যায়।