দরাজ কণ্ঠকে চোখের জলে বিদায় দেওয়ার পর এবার আয়োজকদের প্রতি কড়া নির্দেশ জারি করল কলকাতা পুলিশ। প্রতিটি কনসার্টে রাখতে হবে অ্যাম্বুলেন্স। ইস্যু করা যাবে না অতিরিক্ত পাস। জানাতে হবে লোকাল থানাকেও। যদিও KK’র ময়না তদন্তের রিপোর্টে দেখা গেছে হার্ট অ্যাটাকের কারণেই মৃত্যু হয়েছে শিল্পীর। তবুও আগামী দিনে এই ধরণের কোন কনসার্টের আগে নিরাপত্তা নিয়ে কোনরকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে অনুষ্ঠান মঞ্চের নিকটবর্তী হাসপাতালেও অনুষ্ঠানের খবর দিতে হবে আয়োজকদের। যাতে হাসপাতালগুলিও তাদের জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত ব্যবস্থা আগে ভাবেই সেরে রাখতে পারে।
নেই কেকে! মানতেই পারছেন না আসমুদ্র-হিমাচল। একটা মৃত্যু শেষ করল একটা যুগের। মৃত্যুর কারণ নিয়েও উঠেছে একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ। কিন্তু সব কিছুকেও ছাড়িয়ে ‘নক্ষত্রের দেশে’ কেকে! আর তার মৃত্যুর পর ভাইরাল নজরুল মঞ্চের কনসার্টের ভিডিও। চরম অব্যবস্থার ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল। এর মাঝেই আগুনে ঘি ঢেলেছেন সেদিনের কনসার্টের দায়িত্বে থাকা ফটোগ্রাফার।
তার বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি সেদিনের ভিড়ে তিনি নিজেও তার ফটোগ্রাফির কাজটাও করতে পারেন নি ঠিক ঠাক ভাবে। এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেদিনের কনসার্টের দায়িত্বে থাকা ফটোগ্রাফার পলাশ হালদার জানিয়েছেন, ‘বাইরে তখন প্রচণ্ড ভিড়। নজরুল মঞ্চেও তখন থিকথিকে ভিড়। কোন এক ছাত্রনেতার নির্দেশ মেনেই খুলে দেওয়া হয় মঞ্চের বন্ধ গেটগুলি। কেকে অনুষ্ঠান শুরু করতেই পিলপিল করে লোক ঢুকতে শুরু করে। তার মধ্যেই প্রচণ্ড গরম কাজ করছিল না মঞ্চের এসিও। তিনি বলেন, আয়োজক এবং কলেজের অনুষ্ঠানের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের এই বিষয়টি নজর রাখা উচিত ছিল। পড়ে ভিড় সামলাতে না পেরে Fire Ext. স্প্রে করতে হয়’।
একই অভিযোগ করেন নজরুল মঞ্চের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীও। পাঁচটি গেট, কিন্তু খোলা ছিল মাত্র দুটো। প্রচুর ভিড় সেই গেটও হার মানে। দরজা ভেঙে পিল পিল করে লোক ঢুকে পড়ে। নজরুল মঞ্চে এতদিন ধরে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। কত শো, কত কনসার্ট হয়েছে। কিন্তু কোনওদিন এত মানুষের দাপাদাপি দেখেননি নিরাপত্তা কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই কর্মী বলছেন, এত ভিড়, এসি কাজ না করা, এত আবদ্ধ পরিবেশই কাল হল। এমনটা হবে তিনিও ভাবতে পারেননি।
কেকে-র মৃত্যু অনেক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে কলকাতাকে। এই শহরের সঙ্গীতপ্রেমী মানুষদের। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের নামে ফ্রি-তে গান শোনার হ্যাংলামিকে। যে নজরুল মঞ্চে প্রায় তিন হাজার কাছাকাছি আসন। সেখানে মঙ্গলবার কেকে-র লাইভ কনসার্টে হাজির হয়েছিল তিন গুণ বেশি দর্শক। ফুলবাগানের গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের ফেস্ট ঘিরে অনেক দিন আগে থেকেই উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। কলকাতায় কোনও বিখ্যাত শিল্পীকে নিয়ে এমন উন্মাদনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু মঙ্গলবার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় অনুষ্ঠানের নামে দাপাদাপি।
এবিষয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক কুনাল সরকারও মুখ খুলেছেন। এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন মৃত্যুর পিছনে সম্ভাব্য সবকটি কারণও। তিনি লিখেছেন, এই মৃত্যু যতটা দুঃখ, ঠিক ততটাই লজ্জার”! ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এক বেদনাদায়ক সন্ধ্যা’ একই সঙ্গে লিখেছেন, যতটা দুঃখ, ততটাই লজ্জার।’ পাশেই রেখেছেন কেকে-র মৃত্যুর কারণ। যার মধ্যে সবার প্রথমে উঠে এসেছে এদিন নজরুল মঞ্চে উপস্থিত দর্শকদের ভিড়।
আরও পড়ুন: KK-র মৃত্যুর পরও ‘দুঃসাহসী’ সোনু নিগম! জুলাইতে কলকাতায় কনসার্ট রাখলেন
তারপরেই বলেছেন, AC বেহাল- ভীষণ গরম। কারণ এদিন ক্যামেরায় ধরা পড়েছে AC না চলায় দরদরিয়ে ঘামছিলেন গায়ক। তুলে ধরেছেন মুখের উপর Fire Ext. স্প্রে করার ঘটনা। এছাড়াও চিকিত্সক কুনাল সরকার কেকের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন নজরুল মঞ্চের চরম অব্যবস্থাকে। আর এসবের জন্য শিল্পীর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তিনি। যদিও সমস্ত ঘটনাই অস্বীকার করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।
তবে বড় কোন কনসার্টের ক্ষেত্রে আর কোনরকম ঝুঁকি নিতে নারাজ কলকাতা পুলিশ। এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় কলকাতার পুলিশ কমিশনর বিনীত গোয়েল বলেন, "ভবিষ্যতে যাতে অতিরিক্ত ভিড়ের ঘটনা না ঘটে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একজন ডাক্তারের সঙ্গে একটি অ্যাম্বুলেন্স অনুষ্ঠান স্থলের বাইরে অবশ্যই রাখতে হবে আয়োজকদের। যাতে প্রয়োজন হলে অবিলম্বে চিকিৎসা সংক্রান্ত সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়।”
এছাড়াও, অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকের সংখ্যা বিবেচনায় রেখে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি সেদিনের ভিড়ের প্রশ্নে বলেন, অনুষ্ঠানে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিল। এই ধরণের অনুষ্ঠানে ভিড় স্বাভাবিক। তবে পুলিশের তরফে কোন গাফিলতির অভিযোগ মানতে চাননি তিনি। সেই সঙ্গে তিনি আয়োজকদের কাছে অনুরোধ করেন ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য, অনুষ্ঠান স্থলের বাইরেও প্রোজেক্টরের ব্যবস্থা রাখা যাতে দর্শকরা বাইরে থেকেও অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। তবে তিনি জোর দিয়েছেন যাতে আসন সংখ্যার বেশি টিকিট বিক্রি না হয়, অথবা লোক ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করার”।
রূপঙ্করের বিতর্কিত সেই ভিডিওর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মুম্বইয়ের জনপ্রিয় শিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নথের আকস্মিকপ্রয়াণ (KK Death)। তারপর থেকেই নেটদুনিয়ায় সমালোচনা। বিতর্কের ঝড়। ক্রমাগত হুমকি ফোনও পেয়েছেন। এবার সেই প্রেক্ষিতেই সাংবাদিক সম্মেলন করে হাতজোড় করে ক্ষমাভিক্ষা চাইলেন রূপঙ্কর। বিতর্কে ইতি টানতে ভিডিও ডিলিট-ও করলেন রূপঙ্কর। তাঁর কথায়, কেকে সম্পর্কে কোনও বিদ্বেষ নেই। ভারত বিখ্যাত শিল্পী তিনি। গুছিয়ে কথা না বলতে পারাতেই বিতর্ক। আমি তো শুধু বাংলার শিল্পীদের কথাই বলতে চেয়েছিলাম। যাঁদের নাম সেদিন ভিডিওতে উল্লেখ করেছি, তাঁদের জিজ্ঞেস করে নাম নেওয়া উচিত ছিল। আমার সঙ্গীতজীবনের কেরিয়ারে এরকম বিভীষিকার শিকার হইনি কখনও।