রমজান মাসেই কলকাতার বুকে দুই ঐতিহ্যবাহী মসজিদের নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে খুশির হাওয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। সারাবছর নমাজ পড়ার জন্য মুসলিম মহিলাদের জন্য পৃথক বসার ব্যবস্থা, স্নানকক্ষের ব্যবস্থা করতে চলেছে কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদ এবং নাখোদা মসজিদ। সমস্ত রীতি রেওয়াজকে দূরে সরিয়ে এই সিদ্ধান্ত কলকাতার বুকে কার্যত নজিরবিহীন। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নারীদের মসজিদ বা মাজারে গিয়ে প্রকাশ্যে নমাজ পাঠের অনুমতি ছিল না। কিন্তু সে সব বাধাকে তোয়াক্কা না করে বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নাখোদা মসজিদ এবং টিপু সুলতান মসজিদকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয় এ ব্যাপারে।
নাখোদা মসজিদের ইমাম শাফিক কাশমি জানান, অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রাপ্ত চিঠিতে তাঁরা সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন এবং সেই মতোই পরিকল্পনা এগোচ্ছে। তিনি আরও বলেন, " আমরা চিঠি পাওয়ার পরেই এই বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করি। বহু মহিলারা আসেন নমাজ পড়তে এবং তাঁরা মসজিদের এককোণায় বসে নমাজ পড়েন। কিন্তু এবার ম্যানেজিং কমিটির তরফ থেকে তাঁদের জন্য আর সুব্যবস্থার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। নাখোদা মসজিদে ঢোকার তিনটি রাস্তা রয়েছে তার মধ্যে একটি মহিলাদের যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এছাড়াও, মহিলাদের জন্য আলাদা নমাজ পড়ার জায়গা, স্নানঘর এবং বিশ্রাম ঘরেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে"।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে গোমাংস সংক্রান্ত পোস্ট করে দু’বছর পর গ্রেফতার আদিবাসী শিক্ষক
বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মহঃ ইয়াহিয়া বলেন, "আমরা অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করেছি এই দুই বিখ্যাত মসজিদ দুটিতে মহিলাদের নমাজ পড়ার জন্য কোনও সুবন্দোবস্ত নেই। শরিয়তে বলা হয়, একমাত্র পর্দাঘেরা স্থানে বসেই মহিলারা নমাজ পড়তে পারবেন। কিন্তু এর কোনও বিধান আলাদা করে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে মহিলারা এসে এই মসজিদ পরিদর্শন করতে আসেন কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এখানে প্রার্থনা করতে পারেন না। তাই অনেক আলাপ আলোচনার পর আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মসজিদের কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠাই।" ইয়াহিয়া আরও বলেন, "আমরা খুব খুশি যে মসজিদ কর্তৃপক্ষ আমাদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।"
উল্লেখ্য, মসজিদ ছাড়াও চিঠিটির একটি কপি কলকাতা পুরসভার কাছেও পাঠানো হয়েছে, যেখানে মহিলাদের জন্য আলাদা করে 'পর্দা'র ব্যবস্থা, স্নানঘর এবং প্রতিবন্ধীদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, "বিদেশ থেকে অনেক মহিলারা আসেন মসজিদ পরিদর্শন করতে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এখানে প্রার্থনা করতে পারেন না তাঁরা, সেই কারণে আমরা অত্যন্ত লজ্জিত"।
এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা আমিনা খাতুন উচ্ছ্বসিত স্বরে বলেন, " খুবই ভালো হয় যদি মসজিদের মধ্যেই আমাদের জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্দ থাকে। আমরা পুরুষদের সঙ্গে একসাথে বসে নমাজ পড়তে পারি না, কারণ তা ইসলাম বিরোধী। যদি এরকম ব্যবস্থা পাওয়া যায় তাহলে বাইরে থেকেও আমরা নমাজ পড়তে পারবো"।
উল্লেখ্য, কলকাতার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ এই টিপু সুলতান মসজিদ। টিপু সুলতানের ছোট ছেলে গুলাম মহম্মদ ১৮৪২ সালে নিজের বাবার নামে এই মসজিদটি স্থাপন করেন। অপরদিকে নাখোদা মসজিদের ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল ১১ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ সালে। ইতিহাসের নিরিখে শহরের প্রাচীনতম এই দুই মসজিদের এহেন ভাবনাচিন্তায় রমজান মাসেই খুশির হাওয়া মুসলিমদের মধ্যে।
Read the full story in English