উন্নাও নাবালিকা ধর্ষণকাণ্ডে প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করল দিল্লির আদালত। পকসো আইনে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাকে।
২০১৭ সালে নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত করা হল সেঙ্গারকে। এই মামলা বেকসুর খালাস পেয়েছে আরেক অভিযুক্ত শশী সিং।
গত ৫ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে লখনউ থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয় উন্নাও নাবালিকা ধর্ষণ মামলা। শুনানি শেষে জেলা জজ ধর্মেশ শর্মা গত সপ্তাহে নির্দেশ দান প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছিলেন। সোমবার কুলদীপ সিং সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করল দিল্লির আদালত।
বছর দুয়েক আগে নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারিণীর দাবি, ২০১৭ সালের জুন মাসের চার তারিখে একটি চাকরির জন্য স্থানীয় এক মহিলার সঙ্গে উন্নাওয়ে ওই বিধায়কের বাড়িতে গেলে ধর্ষিতা হন তিনি। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর। তরুণীর পরিবার অভিযোগ করে,ধর্ষণের ঘটনার কিছুদিন পর গ্রামের দুই যুবক ওই কিশোরীকে ফের অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে। এক্ষেত্রেও জড়িত ছিল সেঙ্গারের ঘনিষ্ঠরা। অভিযোগ দায়ের পর কিশোরীর বয়ানের ভিত্তিতে তিন জনকে গণধর্ষণ ও পকসো আইনে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: উন্নাও কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সেঙ্গার, এক নজরে মামলার গতিপ্রকৃতি
বহুবার সেঙ্গারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ সে অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি তাঁর পরিবারের। শেষমেশ অভিযোগ নিলেও, অগ্রগতি হয়নি তদন্তের। পরিবারের দাবি, ফের অভিযোগ করতে গেলে, উল্টে কুলদীপ সেঙ্গারের দায়ের করা মিথ্যে এফআইআরের ভিত্তিতেই নির্যাতিতার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির অস্ত্র আইনে ভুয়ো অভিযোগ আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ পরিবারের। ২০১৮ সালের ৩-রা এপ্রিল তাঁকে গ্রেফতার করে বন্দি করা হয় উন্নাও জেলে। অভিযোগ, সেখানে লাগাতার অত্যাচার চলতে থাকে তাঁর উপর। বিচার পাওয়া দূরের কথা, বিচার চাওয়ার অপরাধেই জেলের মধ্যে মার খেতে হয় ধর্ষিতার বাবাকে।
বিষয়টি কোনও ভাবেই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছিলেন না নাবালিকার পরিবার। ধর্ষণের ঘটনার প্রায় এক বছর পরে, ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল নিগৃহীতা কিশোরী ও তার মা মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীর বাড়িতে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তখনই ঘটনাটি সবার নজরে আসে।
আরও পড়ুন: অভিযুক্ত কুলদীপ সেঙ্গারের উপস্থিতিতে এইমসে শুরু উন্নাওকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া
বিষয়টি কোনও ভাবেই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছিলেন না নাবালিকার পরিবার। ধর্ষণের ঘটনার প্রায় এক বছর পরে, ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল নিগৃহীতা কিশোরী ও তার মা মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীর বাড়িতে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তখনই ঘটনাটি সবার নজরে আসে। তবে, পরের দিনেই খবর মেলে, উন্নাও জেলের মধ্যেই মারা গিয়েছেন ধর্ষিতা কিশোরীর বাবা। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তাঁর শরীর জুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলেও, মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় সেপ্টিসেমিয়ায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল গ্রেফতার হয় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার সহ মোট পাঁচ অভিযুক্তকে। তরুণীর পরিবার অভিযোগ ছিল, জেলে থেকেও নানা ভাবে তাদের গতিবিধির খবর পেত বিধায়ক সেঙ্গার। হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই রায়বরেলি যাওয়ার পথে, গুরুবক্সগঞ্জের সড়কের উপর মারাত্মক দুর্ঘটনার মুখে পড়েন ধর্ষিতা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর কাকিমা, বোন ও আইনজীবী। ধর্ষিতা এবং তাঁর আইনজীবী আশঙ্কাজনক অবস্থায় লখনউয়ের হাসপাতালে ভর্তি হলেও, ঘটনাস্থলেই মারা যান তাঁর কাকিমা এবং বোন।
এর আগেই অবশ্য বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে নিজের প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল নির্যাতিতা। খবর প্রকাশ্যে আসতে লখনউয়ের আদালত থেকে বিচারপ্রক্রিয়া দিল্লির আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়।হাসপাতালেই বসানো হয় স্পেশাল কোর্ট।
Read the full story in English