ফের চিতার মৃত্যু। কুনো জাতীয় উদ্যানে আজ ফের মৃত্যু হল এক মহিলা চিতার। এই নিয়ে চিতার মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হল ৬। গত সেপ্টেম্বরেই প্রোজেক্ট চিতার অধীনে ২০ টি চিতাকে নামিবিয়া ও আফ্রিকা থেকে আনা হয়।
প্রধান প্রধান বন সংরক্ষক অসীম শ্রীবাস্তব বলেছেন “আজ সকালে ধাত্রী নামের একটি মহিলা চিতাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।”গত সেপ্টেম্বর থেকে নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কুনোতে স্থানান্তরিত ২০টি চিতার মধ্যে ছয়টি এখনও বিভিন্ন কারণে এখন পর্যন্ত মারা গেছে। কুনো জাতীয় উদ্যানের জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় উদ্যানে থাকা ১৪ টি চিতা সুস্থ রয়েছে। কুনো এবং নামিবিয়ার বিশেষজ্ঞদের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক দল নিয়মিত চিতাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। দুটি মহিলা চিতার মধ্যে মধ্যে বুধবার সকালে একটি মহিলা চিতা-ধাত্রীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃত্যুর কারণ জানতে পোস্টমর্টেম করা হচ্ছে।
‘প্রোজেক্ট চিতা’ নিয়ে শীর্ষ আদালতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করল আন্তর্জাতিক চিতা বিশেষজ্ঞদের একটি দল। সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দিয়ে তারা জানিয়েছেন,‘‘প্রোজেক্ট চিতা নিয়ে আমাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছিল”। সুপ্রিম কোর্টে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়ার চিতা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে ২০ টি চিতা ভারতে স্থানান্তরের বিষয়ে তাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। এই বিশেষজ্ঞরা প্রোজেক্ট চিতার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, যাদের তত্ত্বাবধানে ২০টি চিতা বিদেশ থেকে ভারতে আনা হয়েছিল। তারা সুপ্রিম কোর্টে একটি চিঠি লিখে প্রকল্পের পরিচালনার বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তারা সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন, “নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এবং সঠিক ও সময়মতো চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে চিতার মৃত্যু রোধ করা যেত। যদি সময়মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ডাকা হত এবং পরিস্থিতিকে ‘উপেক্ষা’ করা না হত”। নামিবিয়া থেকে আনা প্রোজেক্ট চিতার অধীনে আটটি চিতাকে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১২ টি চিতা এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল। ১১ মার্চ প্রথম দুটি চিতাকে বনে ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কুনো জাতীয় উদ্যানে পাঁচটি প্রাপ্তবয়স্ক চিতা এবং তিনটি চিতা শাবক মারা গেছে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে, জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ (এনটিসিএ) দ্বারা দায়ের করা একটি পিটিশনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট চিতা প্রকল্পের উপর ২০১৩ সালের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তবে আদালত এখনও চিতা প্রকল্পের ওপর নজরদারি ফের শুরু করেছে। একই সময়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা দুটি চিতা, তেজস এবং সুরজ, যাদের মৃত্যুর কারণ রেডিও কলার থেকে সৃষ্ট ক্ষত, চিতা মৃত্যুর পর দক্ষিণ আফ্রিকার পশুচিকিৎসকও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ডাঃ আদ্রিয়ান টরডিফ তার সহকর্মীদের পক্ষে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং সেই চিঠি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে চিতা বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট ভ্যান ডের মেরওয়ে, বন্যপ্রাণী পশু চিকিৎসক ডঃ অ্যান্ডি ফ্রেজার এবং ডাঃ মাইক টফটের স্বাক্ষর রয়েছে। চিঠিতে “বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আরও ভাল যোগাযোগ, চিতাদের আরও ভাল পর্যবেক্ষণ (মনিটরিং) এবং নিয়মিত রিপোর্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মত একাধিক বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা চিতাদের মৃত্যুর পর্যালোচনা করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টকে বলেছেন কিভাবে চিতা প্রকল্পের বর্তমান ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ” ন্যুনতম কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে চলা হচ্ছে না”, পাশাপাশি বলা হয়েছে বিশেষজ্ঞদের “মতামত” উপেক্ষা করা হচ্ছে। অবহেলার কারণে কি চিতা মারা গেছে? সুপ্রিম কোর্টে বিশেষজ্ঞদের লেখা চিঠিতে তারা এও জানিয়েছেন কীভাবে অবহেলা করা হয়েছে চিতাদের এবং এই অবহেলার পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে আজ তা প্রকাশ্যে।
চিঠিতে বিশেষজ্ঞরা বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে কুনোর কর্মীরা আহত পুরুষ চিতাটিকে সময়মত চিকিৎসা না মহিলা চিতাটিকে খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেয় কুনো কর্তৃপক্ষ সেও আহত হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য। এ সময় পুরুষ চিতার অবস্থার অবনতি হয় এবং কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় পুরুষ চিতার।” বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, ‘পরদিন সকালে কুনো জাতীয় উদ্যান থেকে চিতার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে তারা চিতার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন’। তারা আদালতকে জানিয়েছেন, ‘চিতার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং কিছু ফটোগ্রাফ পাঠানো হয়েছিল তাদের কাছে। যদি তাদের আগে আহত চিতার ছবি দেখানো হত এবং তাদের ক্ষত সম্পর্কে জানানো হতো তাহলে তারা কর্তৃপক্ষকে সেই ঝুঁকি সম্পর্কে আগেই কুনো কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করতেন।”