লাল কৃষ্ণ আডবানি। রাম জন্মভূমি আন্দোলনের পথ তৈরিতে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। ১৯৯০ সালে মন্দিরের আন্দোলন চূড়ান্ত হওয়ার পর আডবানি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রচার শুরু করেন। রাম রথযাত্রা করেছিলেন গুজরাটের সোমনাথ থেকে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা পর্যন্ত। তখন অবশ্য সেই রথ অযোধ্যা পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু, শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে যেন মান্যতা পেল সেদিনের আন্দোলন। খুশি ৯২ বছরের এল কে আডবানি। প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে, বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, শীর্ষ আদালতের রায়ে 'স্বীকৃতি' পেয়েছে তাঁর অবস্থান।
অযোধ্যা রায় ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই বাড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। ৩০ পৃথ্বিরাজ রোডের বাড়িতে বসেই বিজেপির 'লৌহ পুরুষ' চোখ রেখেছিলেন টিভি'র দিকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। মোদী জামানায় লাইম লাইটের বাইরে থাকা বর্ষীয়ান নেতার কোনও 'রা' ছিল না। ততক্ষণে অবশ্য টুইটে 'মার্গ দর্শকের' স্তুতি করে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিকেলের দিকে নীরবতা ভাঙলেন রাম জন্মভূমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা। বিবৃতি দিয়ে জানালেন, অযোধ্যা রায় 'ভারতের স্বাধীনতার পর অন্যতম বড় ঘটনা।' এই রায়ের ফলে, 'রাম মন্দির নির্মাণের পথ সুগম হল' বলে বিবৃতিতে লেখেন তিনি।
আরও পড়ুন: অযোধ্যায় রাম মন্দির: অবশেষে সঙ্ঘ পরিবারের ইচ্ছা পূরণ
সুপ্রিম কের্টোর রায়ে অনুশারে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমি দেওয়া হল হিন্দুদের। অন্যদিকে, মসজিদ নির্মাণের জন্য বিকল্প জমি দেওয়ার নির্দেশ দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। মন্দির নির্মাণের জন্য ৩ মাসের মধ্যে ট্রাস্ট তৈরি করতে কেন্দ্রকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। অযোধ্যার ঐতিহাসিক রায়ে একমত সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতিই। আদালতের নির্দেশের পাশাপাশি ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখতে সব জাতির মানুষের কাছে আহ্বান জানান আডবানি। বিবৃতিতে তিনি লিখেছেন, 'অযোধ্যার মন্দির মসজিদ বিরোধের অবসান ঘটলো। এখন সব বিতর্ক ও মানসসিকতা দূরে ঠেলে সাম্প্রদায়িক মেলবন্ধন ও শান্তি স্থাপনের সময়।' তিনি যোগ করেন, 'রাম ও রামায়ণ দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত। রাম জন্মভূমি পবিত্র ভূমি রূপে মানুষের হদয়ে স্থান পেয়েছে।'
আরও পড়ুন: অযোধ্যার বিতর্কিত জমির সবটাই কেন হিন্দুদের হাতে তুলে দিল সুপ্রিম কোর্ট?
এরই ফাঁকে আদাবানির বাড়িতে হাজির হন রাম জন্মভূমি আন্দোলনের নেত্রী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী। জানান, 'আডবানিজীর জন্য মন্দির নির্মাণের পথ সুগম হয়েছে। তাই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।' তাঁর সংযোজন, 'এল কে আডবানিই প্রথম সংসদে অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি নির্মাণের বিষয়ে বিতর্ক উত্থাপন করেছিলেন। জাতীয়বাদের সঙ্গে ছদ্মবেশী দেশভক্তির ফারাক টের পাওয়া যায় সেদিনেই।'
৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে শনিবার রায় পড়ার সময় কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। আডবানি, উমা ভারতীর সঙ্গেই সেই ঘটনায় অভিযুক্ত বিজেপির আরেক বর্ষীয়ান নেতা মুরলি মনোহর যোশী। অযোধ্যা রায়ের পর তিনি বলেন, 'আদালতের রায় প্রত্যেকের মেনে চলা উচিত। দেশের একতা রক্ষা এখন সব থেকে বড় কাজ।'
Read the full story in English