প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যেকোনও মুহূর্তে ফের ঘটতে পারে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের ঘটনা। ১৫ জুন রাতের পর থেকে সীমান্তের পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। চরম উত্তেজনা রয়েছে সেখানে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই দেশের সেনা। এই পরিস্থিতিতে যখন-তখন সংঘর্ষে জড়াতে পারে ইন্দো-চিন সেনাবাহিনী। প্রাক্তন সেনা কর্তাদের আশঙ্কা এমনটাই।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ইন্দো-চিনা সেনা মুখোমুখি হলেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না-করার নীতি এত দিন মেনে চলেছে ভারত। কিন্তু লাদাখের গালওয়ানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরেই এই নীতি কতটা মানা হবে তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০ জন সেনার মৃত্যুর পর ক্ষোভে ফুঁসছে ভারতীয় বাহিনী। ফলে, চুক্তি ভেঙে উভয় দেশের বাহিনীর সংঘর্ষ জড়ানোর বিষয়টি ক্রমশ তীব্র হচ্ছে।
প্রাক্তন সেনা প্রধান জেনারেল ভি পি মালিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্লপ্রেসকে বলেছেন, 'দুই দেশের সেনার পক্ষেই এত দ্রুত বিরত হওয়া সম্ভব নয়। ফলে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়বে। দুই দেশের বাহিনী যখন চোখে চোখ দিয়ে দাঁড়ায় তখন উত্তেজনা, ক্রোধ প্রবল হয়। যার দরুন ছোট ছোট ঘটনা ঘিরেও বড় সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকে।'
সেনা অফিসার সূত্রে খবর, ১৫ জুন রাতেও নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনার কাছে অস্ত্র ছিল। কিন্তু, তা প্রয়োগ সম্ভব হয়নি ইন্দো-চিন ‘রুল অব এনগেজমেন্ট’ নীতি অনুসারে। যার চরম মূল্য চোখাতে হয়েছে ভারতীয় সেনাকে। ফলে 'রুল অব এনগেজমেন্ট' নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন সেনা কর্তারা মনে করছেন এই নীতি বদলের সময় এসেছে। ফের সংঘর্ষ হলে এই নীতি মানার কোনও প্রয়োজন নেই।
গালওয়ানের পর প্যাংগং টিএসও-তে সংঘর্ষের সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে। এখানেই ৫-৬ মে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষ হয়েছিল। এতে ৭০ ভারতীয় জওয়ান জখম হয়েছিলেন। বর্তমানে এই অংশে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে চিনা বাহিনী তাদের শক্তি বাড়িয়েছে বলে উপগ্রহ চিত্রে জানা গিয়েছে। ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যায়।
আরও পড়ুন- গালওয়ান সংঘর্ষ: অস্ত্র থাকতেও কেন গুলি চালায় নি ভারতীয় ফৌজ?
জানা গিয়েছে, লাদাখের গালওয়ানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরেই ‘রুল অব এনগেজমেন্ট’ বদলে ফেলেছে ভারত। সোমবার রাতের কথা মাথায় রেখে গালওয়ানে নজরদারি বাড়াচ্ছে ভারত। পাশাপাশি লাদাখ অঞ্চলে কমব্যাট পেট্রল চালু করেছে বায়ুসেনা। পাশাপাশি চিনা হামলার আশঙ্কায় সেনা মোতায়েন করা শুরু হয়েছে দারবুক-দৌলতবেগ ওল্ডি (ডিবিও) সড়ক নির্মাণের কাজে।
১৯৬৭ সালে ভারত-চিন সেনা যখন সংঘর্ষে জড়িয়েছিল তখন দুই বাহিনীর কাছেই সীমিত সমরাস্ত্র ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে। পরমাণু শক্রিধর দুই রাষ্ট্রের সেনার কাছেই রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। ফলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আবার, লাদাখে গত বৃহস্পতিবার থেকে সেনা পর্যায়ে কোনও আলোচনা হয়নি। প্রাক্তন সেনা প্রধান জেনারেল বিক্রম সিংয়ের মতে, 'বিভিন্ন স্তরের দুই দেশের সেনা আলোচনায় সমাধানসূত্রে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কূটনৈতিক-রাজনৈতিক পথেই সমাধান আসতে পারে।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন