সীমান্ত সংঘাত দূরে সরিয়ে পূর্ব লাদাখ থেকে সরতে শুরু করল ইন্দো-চিন সামরিক বাহিনী। এই উদ্যোগের জেরে এলএসি (LAC)-তে দীর্ঘ নয় মাসের টানাপোড়েনে ইতি পড়ল, এমনটাই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। মুলত প্যাংগং সো-র দক্ষিণ থেকে এই ডিজএনগেজমেন্ট শুরু হয়েছে। চুক্তি মেনে পিপল লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ ফিঙ্গার-৪ থেকে ফিঙ্গার-৮-এর পূর্ব সীমা পর্যন্ত সরবে। ভারতের তরফে অভিযোগ ছিল, এলএসি পেরিয়ে ফিঙ্গার-৮-এর পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত ৮ কিমি ভিতরে ধুকে গিয়েছিল চিন সেনা। পাশাপাশি ফিঙ্গার-৩-এর ধ্যান সিং থাপা ফাঁড়িতে আপাতত অবস্থান করবে ভারতীইয় সেনা। মাঝের যে জায়গা সেটা নো-পেট্রোলিং জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে। এমনটাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সুত্রে খবর।
এদিকে, এই ডিজএনগেজমেন্ট প্রসঙ্গে এদিন সংসদকে অবগত করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। পুর্ব লাদাখের প্যাংগং সো থেকে সেনা সরানো শুরু করেছে ভারত ও চিন। চিনা তাদের সেনা ফিঙ্গার ৮ পয়েন্টে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, ভারতীয় সেনা প্যাংগং লেকের উত্তর দিকে ফিঙ্গার ৩-এর দিকে সরে যাচ্ছে। একইরকম ভাবে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ দিকেও এইভাবে সেনা সরানোর কাজ চলবে বলে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।
একইসঙ্গে দুই পক্ষই ওই অঞ্চলে নির্মিত সামরিক নির্মাণ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে। সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর দুই দেশের শীর্ষ সেনা কমান্ড্যান্টরা বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে। ভারত সীমান্তের এক ইঞ্চি জমিও কাউকে ছাড়বে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন রাজনাথ। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে অদূর ভবিষ্যতে আরও পদক্ষেপ করা হবে বলে তিনি এদিন আশ্বস্ত করেছেন। এদিন তিনি সংসদে বলেছেন, “পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেকে সেনা সরানো নিয়ে চিনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির দিকে এগোচ্ছে ভারত।”
পাশাপাশি, এই কনকনে ঠান্ডায় যেভাবে ওই অঞ্চলে ভারতীয় সেনা লালফৌজের আগ্রাসন রুখে দিয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। বলেছেন, “ভারতীয় সেনা এই প্রতিকূল আবহাওয়াতেও পরাক্রম ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে পূর্ব লাদাখে। তাঁদের বলিদান দেশ কখনও ভুলবে না। আমাদের মূল লক্ষ্য হল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা ও শান্তি বজায় রাখা। তার থেকে পিছু হটবে না ভারত।”
প্রসঙ্গত, বুধবারই বিবৃতি জারি করে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, পূর্ব লাদাখ থেকে সামরিক সম্ভার সরাতে শুরু করল ভারত-চিন। সুত্রের খবর, প্যাংগং লেকের দক্ষিণ-উত্তর প্রান্ত থেকে সরছে সেনা। দুই তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রকের মুখপাত্র উ কিয়াং বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক নবম পর্বের কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের সুত্র ধরে এই সিদ্ধান্ত। নবম পর্বের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ-উত্তর প্রান্ত থেকে সরবে দুই দেশের ফ্রন্টলাইন ইউনিট। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।‘ সামরিক ভাষায় একে ‘ডিজএনগেজমেন্ট’ বলা হয়।