ইন্দো-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পেট্রলিং পয়েন্ট ১৪ ও ১৫ থেকে সেনা সরালেও ফিঙ্গার-৪ থেকে ৮ এলাকা এখনও লাল ফৌজের কব্জায়। গত ১৪ জুলাই দুই দেশের সেনা কমান্ডার পর্যায়ের আলোচনা হলেও দেপসাং বা প্যাংগন থেকে সেনা সরানোর বিষয় নতুন করে আগ্রগতি হয়নি। ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, চিন দ্রুত তাদের অবস্থান বদল করবে না। এই পরিস্থিতে চিনা সেনা যেসব অঞ্চলে এখনও ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছে সেই সব জায়গায় বাড়তি বাহিনী মোতায়েনের কথা বিবেচনা করছে দিল্লি। প্রয়োজনে শীতেও অতি উচ্চতায় বাহিনী থাকবে।
নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা প্রশমণে ভারত-চিন সেনা ও কূটনৈতিকস্তরে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে সম্মতি জানায় দিল্লি ও বেজিং। কিন্তু, দুই দেশের সেনা পর্যায়ের চুর্থ আলোচনার পর নিয়্ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা সরাতে কোনও পদক্ষেপ করেনি লাল ফৌজ। ফলে, নতুন করে ইন্দো-চিন সেনাস্তরের আলোচনার বিষয়টি এখন অনিশ্চত হয়ে পড়েছে।
উভয় দেশের সেনাই গালওয়ান উপত্যকার পিপি-১৪ ও ১৫ থেকে সরেছে। তবে, পিপি-১৭-এ থেকে মাত্র ১ কিমির মধ্যে এখনও দুই দেশের ৫০ জন করে সেনা জওয়ান উপস্থিত রয়েছে। প্যাংগং এখন ভারতের মাথা ব্যথার কারণ। ফিঙ্গার-৫ থেকে চিনা বাহিনী সরলেও তারা ফিঙ্গার-৪ এর রিজলাইন দখল করে রয়েছে। ফিঙ্গার ৪ থেকে ৮ এর মধ্যে লাল ফৌজ বেশ কিছু নির্মাণ করেছে। ভারত জানিয়েছে ওই নির্মাণ নিয়ন্ত্রণরেখার উপর হয়েছে।
দুই দেশের সেনা কমান্ডার পর্যায়ের আলোচনায় স্থির হয়েছিল বিরোধের চার পয়েন্টে কোনও দেশের সেনাই সাময়িকভাবে নজরদারি চালাবে না। মে মাসের আগে ওইসব অঞ্চলে যে পরিস্থিতি ছিল সেই অনুরূপ স্থিতাবস্থা ফেরানোর কথা জানিয়েছে ভারত। দেপসাংয়ে চিনের সেনা অনেকটাই ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল বলে জানা যায়। তবে বর্তামে এখানে দুই দেশের ববাহিনী মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নেই। যদিও, দেপসাংয়ে ভারতীয় সেনাকে নিজের এলাকায় নজরদারিতে বাধা দিচ্ছে লাল ফৌজ।
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণরেখার উচ্চতর এলাকায় সেনা মোতায়েন থাকবে বলে বিবেচনা করেছে ভারতীয় সেনা। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাভাবিকবাবে যত সেনা মোতায়েন থাকে ঠান্ডার কথা মাথায় রেখে তার থেকে প্রায় দ্বিগুণ সেনা ওইসব এলাকায় মোতায়েন রাখা প্রয়োজন। প্রচণ্ড ঠান্ডায় নিয়ন্ত্রণরেখার অধিক উচ্চতায় সেনা মোতায়েন শুধু যাতায়াতের জন্যই অসুবিধার নয়, বরং নানা সামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রেও বেশ কঠিন। তবে পুরো বিষয়টিকেই চ্য়ালেঞ্জ বলে দেখছে ভারতীয় সেনা।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কমান্ডার জেনারেল দেবরাজ অনবু বলেছেন, 'অনেক আগেই বিষয়টি জেনে যাওয়ায় প্রস্তুতি নিতে তেমন অসুবিধার কথা নয়। নভেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে, তার মধ্যে বাড়তি মজুতদারী করে ফেলতে হবে। সমস্যার হলেও, একেবারে করা যাবে না এমনটা নয়।' আবার অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এ পি সিংয়ের দাবি, শীতে অধিক উচ্চতায় বাড়তি সেনা মোতায়ের অতিমাত্রায় ব্যয় সাপেক্ষ। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতিতে প্রকৃতি ও শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার পাশাপাশি সেনাকে নিজেদের স্বাস্থ্যেরও
উপরও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
দেপসাং, গালওয়ান উপত্যকা গোগরা পোস্ট ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই পর্যায়ে সেনাদের বিশেষ ব্যক্তিগত সামগ্রীর প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া অধিক উচ্চতায় মাইনাস ২০ ডিগ্রিতে বাড়তি বাহিনীর থাকার জন্য বিশেষ তাঁবারও প্রয়োজন।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন