অনবরত ধস নেমে বন্ধ হয়ে গেল সিকিম-বাংলা যোগাযোগ। জায়গায় জায়গায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে জাতীয় সড়ক। দুই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায় চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের। শনিবারের পর রবিবারও নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে পাহাড় থেকে সমতলগামী পর্যটকদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনিক মহলে শুরু হয়েছে তৎপরতা। কিন্তু লাগাতার ধস নামায় কাজ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রশাসনকে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। সেবকের কাছে রাখা হয়েছে সরকারি বাস। পাহাড় থেকে পায়ে হেঁটে নামা পর্যটকদের শনিবার থেকেই দফায় দফায় সেবক থেকে সমতলে ফেরানোর কাজ শুরু করেছে এনবিএসটিসি। সতর্ক করা হয়েছে পূর্ত দপ্তরকে।
বৃহস্পতিবার সকালে সিকিমের লাইফলাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নেমে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। ২৯ মাইলে ধস নেমে সিকিম কালিম্পংগামী সড়কের ৮০ শতাংশ রাস্তাই তিস্তা গর্ভে চলে যায়। এরপরেই সিকিমের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ওই এলাকায় ধস সরিয়ে রাস্তা মেতামতির কাজ শুরু হতেই শনিবার ধস নামে সেবকের কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে। সেখানে ধস সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু হতেই সেবক কালীবাড়ি থেকে সেবক বাজার পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় ধস নেমে নদী গর্ভে তলিয়ে যায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। যার দরুন সেবকেই আটকে পড়েন কয়েকশো পর্যটক। সেবক হয়ে ডুয়ার্স রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পূর্ত দপ্তর পাহাড় কেটে রাস্তা কিছুটা বাড়িয়ে ওই পথে হালকা যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে। শনিবার ওই রাস্তা পুনর্নির্মাণের কথা ছিল।
কিন্তু শনিবার সকাল থেকে ৩১নম্বর জাতীয় সড়কের সেবক ও মংপংয়ের কাছে দফায় দফায় ধস নামা শুরু হয়। সেবক কালীমন্দিরের সামনে,হনুমানঝোরা, কালীঝোরা, শ্বেতীঝোরা, রম্ভি মিলিয়ে অন্তত ২৫ জায়গায় ধস নামে। বিভিন্ন জায়গায় ধস নামার দরুন পর্যটক থেকে শুরু করে প্রচুর মানুষ আটকে পড়েন। অনেকেই হেঁটে ধস কবলিত এলাকা পার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেবকের কাছে এসে তাঁদের আটকে পড়তে হয়। সেবকে ঢোকার মুখে একটি পেট্রোলপাম্পে অপেক্ষা করতে থাকেন পর্যটকেরা। অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় অনেকেই কান্নাকাটি শুরু করেন। স্থানীয়রাই তাঁদের জন্যে জল ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কী ভাবে তাঁরা শিলিগুড়ি ফিরবেন সে নিয়ে সংকট থেকে তখনও মুক্তি পাননি তাঁরা। এরপরই ঘটনাস্থলে থাকা দুই সাংবাদিক বিষয়টি লক্ষ করে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকে পুরো বিষয়টি জানান। খবর পেয়েই সেবকে এনবিএসটিসি-র বাস পাঠানোর নির্দেশ দেন গৌতম দেব। মন্ত্রীর নির্দেশে তিনটি বাস পাঠানো হয় সেবকে৷ সেখান থেকে সমস্ত পর্যটকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় শিলিগুড়িতে।
রবিবার সকালে ওই এলাকায় ধস সরানোর কাজ শুরু করে পূর্তদপ্তর। কিন্তু সেবকে ফের বড় ধস নামায় আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে পূর্তদপ্তরকে। এদিকে সেবক হয়ে ডুয়ার্স রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সমস্ত গাড়ি গজোলডোবা হয়ে ঘুরপথে ডুয়ার্সে যাচ্ছে। ফলে ওই এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়েছে। এদিকে,সুযোগ বুঝে সেবক থেকে শিলিগুড়ি চড়া ভাড়া হাঁকাচ্ছে একদল অসাধু গাড়ির ব্যবসায়ী।
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন," পরিস্থিতি অনেকটাই খারাপ। সেবকের কাছে বেশ কয়েক জায়গায় ধস নেমেছে। আমরা পর্যটকদের শিলিগুড়ি ফেরানোর জন্যে গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। জেলাশাসকদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। কেউ যাতে বেশি ভাড়া না নেয় তা দেখার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।"