২০২৯ সালে একযোগে নির্বাচনের প্রস্তুতি, আইন কমিশন শীঘ্রই ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’ সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেবে। আইন কমিশন শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এক দেশ এক নির্বাচন ইস্যুতে তার রিপোর্ট জমা দিতে পারে।
সাত মাস আগে ফেব্রুয়ারি থেকে রাজনৈতিক দল এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছে। সবকিছু পরিকল্পনা মতো চললে ২০২৯ সালের নির্বাচন একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। এক দেশ এক নির্বাচন ইস্যুতে আইন কমিশন আজই একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছে।
সকাল ১১টায় কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থির সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সূত্রের খবর ওয়ান নেশন- ওয়ান ইলেকশন নিয়ে আইন কমিশন তার অবস্থান চূড়ান্ত করবে। একই সঙ্গে এর জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করবে আইন কমিশন।
আজ আইন কমিশনের বৈঠক, ৩টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছে। ‘ওয়ান নেশন-ওয়ান ইলেকশনের’ চূড়ান্ত রিপোর্ট , পকসো আইনে বয়স কমানোর বিবেচনা করবে আইন কমিশন।
২২ তম আইন কমিশনের একটি বড় বৈঠক আজ অনুষ্ঠিত হতে চলছে। এই বৈঠকে তিনটি আইন নিয়ে আলোচনা হবে এবং কমিশন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে। বৈঠকের প্রথম বিষয় ওয়ান নেশন-ওয়ান ইলেকশন। যার ভিত্তিতে আইন কমিশন চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করবে।
দ্বিতীয় যে বিষয় আলোচনায় উঠে আসবে সেটা হল POCSO আইনের অধীনে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্মতির ন্যূনতম বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা উচিত কিনা তা নিয়ে আলোচনা। তৃতীয়টি হল অনলাইনে এফআইআর দায়ের করার মত একটি বিষয়ও আজকের আলোচনায় উঠে আসবে।
বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থির সভাপতিত্বে এই বৈঠক হবে। এসব বিষয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করার পর আইন কমিশন তাদের প্রতিবেদন আইন ও বিচার মন্ত্রকের কাছে পাঠাবে।
আইন কমিশনের বৈঠকে আলোচিত ৩টি বিষয়...
১. এক দেশ - এক নির্বাচন
ওয়ান নেশন- ওয়ান ইলেকশনের জন্য ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার চেয়ারম্যান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ২৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন ইস্যুতে স্বীকৃত জাতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলির মতামত একসঙ্গে নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে আইন কমিশনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে বলেই বৈঠকে ঠিক হয়।
বর্তমানে ভারতে রাজ্য বিধানসভা এবং দেশের লোকসভা নির্বাচন বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন মানে সারা দেশে একই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হওয়া । অর্থাৎ, ভোটাররা একই দিনে, একই সময়ে বা পর্যায়ক্রমে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভার সদস্যদের নির্বাচন করতে তাদের ভোট দেবেন।
২. POCSO আইনে বয়স কমানোর বিবেচনা
আইন কমিশন এই বৈঠকে POCSO আইনের অধীনে বয়স কমানোর বিষয়েও বিবেচনা করা হবে। কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে সম্মতিক্রমে যৌনতার বয়স ১৮ থেকে ১৬ বছর করা হবে কি না। POCSO আইন, ২০১২ এর অধীনে, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুর যৌন নিগ্রহ POCSO আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য। আইন কমিশন এই আইনের অধীনে যৌন সম্মতির বয়স ১৮ থেকে ১৬-তে আনা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা করবে।
৩. অনলাইনে এফআইআর দায়ের করার বিধান
বর্তমানে ঘরে বসেই পুলিশে অভিযোগ জানানোর সুবিধা রয়েছে। যেকোনো রাজ্য পুলিশের ওয়েবসাইটে গিয়ে ই-এফআইআর বা অনলাইন এফআইআর দায়ের করা যেতে পারে। তবে, আইন কমিশন আবারও অনলাইনে এফআইআর দায়েরের বিধান নিয়ে আলোচনা করবে। যদি আইন কমিশন অনলাইনে এফআইআর দায়েরের বিধানের বিষয়ে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়, তা অভিযোগকারীকে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে আরও কিছু সুবিধা প্রদান করবে।
২২ তম আইন কমিশন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিন বছরের জন্য গঠিত হয়েছিল কিন্তু এর চেয়ারপার্সন, বিচারপতি রিতু রাজ অবস্থি, কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, ২০২২ সালের নভেম্বরে নিযুক্ত হন। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে, যখন কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে, সরকার তার মেয়াদ ৩১ আগস্ট, ২০২১ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। দেশে লোকসভা, বিধানসভা এবং অন্যান্য নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে আইন কমিশনের রিপোর্ট শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-এর দিকে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এর জন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সম্প্রতি এর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল, রাজ্যসভার প্রাক্তন বিরোধীদলীয় নেতা গুলাম নবী আজাদ, প্রাক্তন অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান এন. কে. সিং, লোকসভার প্রাক্তন মহাসচিব সুভাষ কাশ্যপ এবং প্রাক্তন চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি। কিন্তু কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর নাম কেন্দ্র সুপারিশ করলেও তিনি ওই কমিটিতে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন যে কমিটি স্বাধীন ভাবে কাজ না করে কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে চলবে।