Advertisment

চিতাবাঘের সহচর গোটা গ্রাম, এই দেশেই

ফরিদ খান নিজের বাড়িতে ঢুকে যান, চিতাবাঘও মিলিয়ে যায় ডানদিকের আঁধারে। গৈরতপুর বাস গ্রামে এরকম ঘটনা নতুন কিছু নয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
waterholeleopard-001

এই জলাশয়টি বন্যজন্তুদের জলপানের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ করেন গ্রামবাসীরা (ফোটো- মনোজ কুমার)

সাক্ষী দয়াল

Advertisment

গতবছরের ডিসেম্বরের শীতরাত। গুরগাঁওয়ের গৈরাতপুর বাস গ্রামে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার সময়ে ফরিদ খান তাকে দেখতে পান। মোটরসাইকেলের হেডলাইটের আলো পড়েছিল চিতাবাঘের গায়ে। নির্জন রাস্তায় তার লেজ নড়ছিল পেন্ডুলামের মতন। ফরিদ খান নিজের বাড়িতে ঢুকে যান, চিতাবাঘও মিলিয়ে যায় ডানদিকের আঁধারে। গৈরতপুর বাস গ্রামে এরকম ঘটনা নতুন কিছু নয়। আরাবল্লী পর্বতমালার কোলে গুরগাঁওয়ের ১০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামের মানুষ এভাবেই তাঁদের নিত্যদিন অরণ্যচরদের সঙ্গে ভাগ করে নেন।

গৈরতপুর বাস গ্রামের বাসিন্দারা জন্তুজানোয়ারদের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধার কথা বললেও, এ অঞ্চলের অনেক বাসিন্দারাই ঠিক তেমনভাবে ভাবেন না। ফলে তাঁদের সঙ্গে জীবজন্তুদের সংঘর্ষ বাধে প্রায়ই। মাত্র ১৮ মাস আগে গৈরতপুর বাসের ৪০ কিলোমিটার দূরে মান্দোয়ারে, গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়া একটি চিতাবাঘকে পিটিয়ে মারে এলাকাবাসীরা। গতবছরের অক্টোবরেই দুঙ্গারপুর গ্রামে লাঠিসোঁটাধারী গ্রামবাসীরা একটি চিতাবাঘকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল। আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রামবাসীদের হঠিয়ে দেন। গৈরতপুর বাস গ্রামের লোকজন অবশ্য বলেন, ওই গ্রামেরই কেউ চিতাবাঘটাকে খেপিয়ে দিয়েছিল।

‘‘সূর্যাস্তের পর বা সকালের জঙ্গল থেকে প্রায়ই চিতাবাঘ নেমে আসে। ৭ দিন-১০ দিন অন্তর গ্রামের মধ্যে দেখা মেলে ওদের। গরমকালে আরও বেশি, কারণ সে সময়ে ওরা জল খোঁজে।’’ বলছিলেন গৈরতপুর বাসের রাহুল। গত সপ্তাহেই একটি জলাশয়ের কাছে হদিশ মিলেছিল একটি চিতাবাঘের মৃতদেহের। ময়নাতদন্তে জানা গেছে সম্ভবত স্বগোত্রীয় কোনও প্রাণীর আক্রমণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন, সামার ডেস্টিনেশন: গরমে বেড়াতে যাওয়ার অফবিট কিছু জায়গা

ওই জলাশয়ের নিকটবর্তী মন্দিরের পুরোহিত রানা কুমার ওরফে ভোলা বাবা প্রথম চিতাবাঘটিকে দেখতে পান। ‘‘আগের রাতে আমি কয়েকমিনিটের জন্য জন্তুর কান্নার শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। তখন দুপক্ষের লড়াই চলছিল। এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে আমি তেমন একটা গুরুত্ব দিইনি। এখানে প্রায়ই চিতাবাঘ আসে, কিন্তু আমাকে কখনও বিরক্ত করে না।’’ দু একর জায়গা জোড়া ১০ ফুট গভীর ওই জলাশয় প্রায় ৪০-৫০ বছর আগে থেকেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।

সরপঞ্চ বিনোদ কুমার জানিয়েছেন, ৫-৬ বছর আগে থেকে জলাশয়টি জীবজন্তুদের জলপানের উপযোগী করে তোলার কাজ শুরু হয়। মাসে অন্তত দু তিনবার ট্যাঙ্কে করে জল এনে জলাশয়টি ভরে তোলা হয়। গ্রীষ্মকালে জল ভরা হয় তারও বেশিবার। ডিএফও শ্যামসুন্দর কৌশিক জানিয়েছেন, ‘‘এলাকাবাসীরাই জল ভরার কাজ করেন, এ ব্যাপারে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।’’  গ্রামবাসীরা জলাশয়ে স্নান করার সময়ে সেখানে দিব্যি জল খেতে আসে বন্যপ্রাণীরা,  এরকম ঘটনা এতই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে এতে কেউই আর ভয় পায় না বলে জানিয়েছেন সরপঞ্চ।।

এই মে মাসের শুরুতেই গৈরতপুর বাস শিবলিঙ্গের পাশেে চিতাবাঘ দেখা গেছে বলে রটে যায়। এক গ্রামবাসী সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করে জানান, সবে ভরপেট খেয়ে মেঝেয় শুয়ে হতচেতন হয়ে ঘুমোচ্ছিল চিতাবাঘটি।

মান্দোয়ার যেখানে চিতাবাঘ পিটিয়ে মারা হয়েছিল, আর গৈরতপুর বাস, এ দুজায়গার মানুষের ভাবনাচিন্তার ফারাকের জন্য খনিজপদার্থ উত্তোলনের কাজকে দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশবিদ চেতন আগরওয়ালের মতে, মান্দোয়ার এলাকায় গত ১৫-২০ বছর ধরে মাইনিংয়ের কাজ চলছিল বলে সেখান থেকে চিতাবাঘরা চলে গিয়েছিল। এতদিন পরে সে এলাকায় চিতা ফেরায় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে গৈরতপুর বাস এলাকায় মাইনিংয়ের তেমন প্রভাব না পড়ায়, সেখানে চিতাবাঘের আনাগোনা মোটামুটি একইরকম থেকেছে। তাতে অভ্যস্তও হয়ে রয়েছেন এলাকার লোকজন।

leopard wildlife environment
Advertisment