এনকাউন্টারে নিহত হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডের চার অভিযুক্ত। বাহবা পাচ্ছে তেলেঙ্গানা পুলিশ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে মিষ্টি বিতরণ। অভিযুক্তদের মৃত্যুতে খুশি হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু তারই মাঝে উঠে আসছে অনেক প্রশ্ন। এনকাউন্টারের বিরোধীতায় সুর চড়িয়েছেন অনেকেই। তালিকায় যেমন রয়েছে, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, তেমনই আছেন বিজেপি সাংসদ মানেকা গান্ধী, এনডিএ শরিক শিরোমণি অকালী দলের সাংসদও। বিচারের বদলে এনকাউন্টারকে দেশের পক্ষে 'ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক' বলে মনে করেন তাঁরা।
এনকাউন্টারের বিরোধিতা করে উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরের বিজেপি সাংসদ মানেকার গান্ধী বলেন, 'যা হয়েছে, তা দেশের জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর। কোনও পরিস্থিতিতেই নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া উচিত নয়। আদালতের মাধ্যমে ওদের বিচার হওয়ার প্রয়োজন ছিল। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিযুক্তদের ফাঁসি দেওয়া যেত।'
আরও পড়ুন: দিল্লি গণধর্ষণে অভিযুক্তদের ক্ষমার আবেদন খারিজ করতে রাষ্ট্রপতিকে জানাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
বিজেপির দীর্ঘ দিনের বন্ধু শিরোমণি অকালী দলের রাজ্যসভার সাংসদ নরেশ গুজরালের মতে, 'আমার দুটি কন্য রয়েছে। মেয়েদের রক্ষায় কড়া নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। তবে, আইনের শাসন থাকা বাধ্যতামূলক। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার হলেও আইনের শাসন বলবৎ হওয়া একান্ত জরুরি। এইভাবে এগোতে থাকলে আমরা ক্রমশ নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যাব। আমরা বর্বর নই। বিচার শেষ হয়নি, জানা গেল না ওই চার অভিযুক্ত ধর্ষণকাণ্ডে আদৌ জড়িত কিনা। এটা ভয়ঙ্কর।'
'বিচার বিভাগই ন্যায় প্রদান করবে, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই তা হবে। এটা কারোর পক্ষে বা বিপক্ষে বলা হচ্ছে না। সুরক্ষা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের সময় ঘটনা ঘটেছে। এতে ত্রুটি থাকতে পারে। তবে, কোনও ভুল বার্তা টেনে আনা উচিত হবে না।' এমনটাই মনে করেন পঞ্চায়েতিরাজ, কৃষি ও কৃষক উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পি রূপালা।
আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝাঁয়ের কথায়, 'অভিযুক্তদের শেষ পরিণতি মৃত্যই ছিল। কিন্তু তা ফাঁসির মাধ্যমে হতে পারত। আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার হয়ে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড হলে বোধহয় নির্যাতিতাও খুশি হতেন।' এনকাউন্টারের ভয়ঙ্কর পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন আরজেডি সাংসদ। হায়দরাবাদে ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। সংসদে দাবি ওঠে পাশবিক অত্যাচার ও খুনের জন্য অভিযুক্তদের তাৎক্ষণিক সাজা ঘোষণার। যার সঙ্গে সহমত নন মনোজ ঝাঁ। তাঁর যুক্তি, 'আমরা আইনের শাসন মানতে বাধ্য। তা না হলে আমরা কী ধরণের দেশ গঠন করছি তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।' তাৎক্ষণিক সাজার দাবিকে 'তালিবানি শাসন' বলে মনে করেন আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝাঁ।
আরও পড়ুন: ‘লজ্জা’! হায়দরাবাদ-উন্নাও-মালদার ঘটনায় সরব মমতা
রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন। মহিলাদের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলায় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে ৪৮টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট রয়েছে। যার মধ্যে ৪৬টি মহিলাদের প্রতি হিংসার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের জন্য। এই ধরণের পাশবিকতা সমাজের দৈনতা। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সময়ের দাবি। তবে, অবশ্যই আইনের শাসনের মধ্যে থেকেই তা করতে হবে।' বিষয়টিকে 'স্পর্শকাতর' বলেও উল্লেখ করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক।
আরএসএসের রাজীব তুলি টুইটে মানেকা গান্ধীর বিরোধিতা করে এনকাউন্টারে হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডের চার অভিযুক্তের মৃত্যুকে সমর্থন জানিয়েছেন। বিষয়টিকে 'ন্যায্য বিচার' বলে মনে করেন তিনি।
Read the full story in English