কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে চলেছে বলেই মনে করছেন সরকারি চিকিৎসক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’। এই মর্মে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তাতে সংগঠনের তরফ থেকে বেশ কয়েকদফা দাবিও তুলে ধরা হয়েছে। স্মারক লিপিতে বলা হয়েছে, চিকিৎসক সমাজ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত করে, গত সাতদিনে রকেটের গতিতে সংক্রমণ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে একাধিক বার সতর্ক করা হলেও, রাজ্যে বড়দিন এবং বর্ষবরণে কোন লাগাম টানা হয়নি সরকারের তরফে। এপ্রসঙ্গে সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।
সংগঠনের তরফে বড়দিন এবং বর্ষবরণের জমায়েতকেই আজকের এই করোনার বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের পজিটিভিটি রেট ২০ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। এপ্রসঙ্গে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো এবং কোভিড আক্রান্তের কন্টাক্ট ট্রেসিং-এর ওপর জোর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এই স্মারকলিপিতে। অপরদিকে স্কুল, কলেজ বন্ধে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

লোকাল ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে কোনভাবেই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে না, বরং তাতে ধাক্কা খাবে রাজ্যের অর্থনীতি বলেই মনে করছেন তাঁরা। সংগঠনের তরফ থেকে সরকারকে কে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ট্রেনের সংখ্যা না কমিয়ে তা বাড়ালে সাধারণ ভাবেই তাতে ভিড় কম হবে এবং করোনার ঝুঁকিও অনেক কম থাকবে কমবে এবং জীবন-জীবিকাও সুরক্ষিত থাকবে। এর সঙ্গে রাজ্যের তরফে জারি করা বিধিনিষেধ বিভ্রান্তিমুলক বলে মনে করছেন তাঁরা। যা বিজ্ঞানের পথ, জনস্বাস্থ্যের নীতির বিপরীত বলেই মত সংগঠনের।
অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী বিগত কয়েকদিনের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে গেছেন। এই নিয়েও সংগঠনের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গোটা রাজ্যে এই সংখ্যা এখনই প্রায় ৫০০র কাছাকাছি। এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে এই বিষয়ে প্ৰশাসনের উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংগঠনের তরফে। সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে সরকার ঘোষিত আর্থিক সুরক্ষা মৃত ডাক্তারের পরিবাররা পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ আবেদনই পড়ে আছে স্বাস্থ্য প্ৰশাসনে। অন্যদিকে সংক্রমিত হলে চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীরা কোথায় চিকিৎসা পাবে সেটাও সুনিশ্চিত নয় বলেও জানানো হয়েছে সংগঠনের তরফে।
এপ্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা জানান, ‘গত কয়েক মাস ধরে মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে আমাদের ক্ষোভের কথা জানান হলেও, আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। দু এক দিনের মধ্যে, চিকিৎসক-স্বাস্থ্য কর্মী, বিশেষ করে জুনিয়র ডাক্তারদের সুরক্ষা, সরকার ঘোষিত আর্থিক সহায়তা এবং সংক্রমিত হলে চিকিৎসার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো’।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি সরকারের কাছে এদিন জমা দেওয়া হয়। তার মধ্যে রয়েছে-
১. সকল সমস্ত স্তরের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা।
২. সরকার ঘোষিত আর্থিক সহায়তার দ্রুত রূপায়ণ।
৩. সংক্রমিত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং জুনিয়র ডাক্তারদের চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা।
৪. সমস্ত চিকিৎসকদের জন্য অতিরিক্ত একমাসের বেতন।
৫. কোভিড কন্ট্রোলরুম চালু করা।
৬. কোভিড প্রোটোকল যথাযথ ভাবে মানা সুনিশ্চিত করা।
৭. সংকটজনক রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা এবং হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো সুনিশ্চিত করা।
৮. কোভিড মৃতদেহগুলির প্রতি যথাযথ সম্মানজ্ঞাপণ করা, সহ একাধিক দাবি সংগঠনের তরফে তুলে ধরা হয়েছে।