কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এই 'ননফেন্সিং সীমান্তে' প্রতিদিনই পাথর ছোড়া হয় বিএসএফ জওয়ানদের ওপর, এমনই অভিযোগ সীমান্তে কর্তব্যরত আধাসেনা কর্মীদের। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার অভিযোগ ওঠে, এখানে তেমনই বিএসএফ জওয়ানদের ওপর পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু, কেন?
বাংলাদেশ সীমান্তের এই চ্যাংড়াবান্ধায় প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। সীমান্তে বয়ে যাওয়া ধরলা নদী এখানে দু'দেশকে ভৌগলিকভাবে পৃথক করেছে। নদীতে মাছ ধরতে নেমে 'ওপার থেকে এপার' চলে আসা যায় সহজে। তাছাড়া, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই অন্ধকারে দু'দেশ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। হারিয়ে যায় সীমান্তের বেড়া। সীমান্তরক্ষী বাহিনীও তখন মূল সীমানা থেকে অনেকটা ভিতরে ঢুকে আসে।
চ্যাংড়াবান্ধার এই আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় রয়েছে যৌনপল্লী। আর তার পাশেই চা-বাগান। ধরলা নদীই এখানে দু'দেশের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এলাকা জুড়ে রয়েছে বিএসএফ জওয়ানদের একাধিক চৌকি। এসব চৌকির কোনওটির আবার ছাউনি ভাঙা। নদীতে চোখ গেলেই দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ছেলেরা মাছ ধরছে। এপারে খেলা করছে ক্ষুদেরা। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই এই দৃশ্য পাল্টে যায়। মাথা চাড়া দেয় অন্ধকার জগৎ।
সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষীর হাতে ইনসাস রাইফেল। কড়া নজর সীমান্তে। কিন্তু কী বলছেন বিএসএফের কর্তব্যরত এই জওয়ান? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই জওয়ান জানান, "কাশ্মীরে সেনাদের ওপর পাথর ছোড়ার দৃশ্য সবাই দেখেছে। কিন্তু এখানেও পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে। হাতে ইনসাস থাকা সত্বেও কিছু করার থাকে না। সীমান্তে জওয়ানদের ওপর পাথর ছোড়া হয়।"
কিন্তু কারা ছোড়ে এই পাথর? কী উদ্দেশ্য তাদের?
উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা ওই জওয়ানের বক্তব্য, "দিনের আলো থাকা পর্যন্ত একেবারে সীমান্ত লাগোয়া অবস্থানে থাকতে হয়। সন্ধ্যার পর কিছুটা পিছু হঠতে হয়। রাতের অন্ধকারে একদল বাংলাদেশী হইহই করে এপারে প্রবেশ করে। তারপর এখান থেকে গরু নিয়ে যায় ওপারে। এখানকার কয়েকজন তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার থাকে না। দিনের পর দিন এই ঘটনাই ঘটছে।"
তিনি জানান, গরু পাচারের সময় যাতে বাধা না দেওয়া হয়, সে জন্য জওয়ানদের ওপর পাথর ছোড়া হয়। আর বাধা দিলে তো পাথর ছোড়া আরও বেড়ে যায়। তাঁর অভিযোগ, "ওই বাংলাদেশীরা ব্যাগে করে পাথর নিয়ে আসে। ওই পাথরই ছুড়তে থাকে জওয়ানদের উদ্দেশে। এরপর নিজেরাই চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দিয়ে তারা আবার নিজেদের দেশে ফিরে যায়। একহাঁটু জলের নদী পেরোনো মামুলি ব্যাপার।"
স্থানীয় বাসিন্দা রাজু শর্মা জানান, এই পাথর ছোড়ার ঘটনা শুনলে অনেকেই অবাক হয়ে যান। কিন্তু এটাই বাস্তব। প্রায় প্রতিদিন এই ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে বিএসএফ আধিকারিকদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।