সাত ঘন্টার তীব্র বিতর্কের পর অবশেষে সোমবার মধ্যরাতে লোকসভায় পাস হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দেন ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ করেছিল কংগ্রেস। এই কারণেই এখন এই বিল আনতে হয়েছে। দেশভাগের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিভাজনকে প্রশয় দিয়েছে কংগ্রেস, এমনটাই মত পদ্ম শিবিরের 'চাণক্যর'।
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে রায় লোকসভায়
লোকসভায় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সমালোচনার বিরোধিতা করে অমিত শাহ বলেন, ‘‘আমাদের কেন এই বিল নিয়ে আসতে হল? স্বাধীনতার সময় যদি ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করা না হত, তাহলে এই বিলের আজ কোনও প্রয়োজন থাকত না।" সাত ঘন্টা ধরে বিল নিয়ে আলোচনার পর যখন ভোটাভুটি হয় তখন ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাত পেরিয়েছে। শেষপর্যন্ত বিলের পক্ষে ভোট দেন ৩১১ জন, আর বিপক্ষে ছিলেন ৮০ জন। বিল পাশের আগে এআইএমআইএম-এর আসাউদ্দিন ওয়াইসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাহ বলেন, "আমাদের নাগরিকপঞ্জির জন্য মঞ্চ প্রস্তুতির কোনও প্রয়োজন নেই। আমরা দেশজুড়েই এনআরসি করব। একটিও অনুপ্রবেশকারীদের সেখানে রেহাই দেওয়া হবে না।"
বিলের সপক্ষে যুক্তি সাজিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে এই প্রস্তাবিত আইনের একমাত্র উদ্দেশ্য হল আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা এবং যারা ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে পালিয়ে এসে 'ভয়ঙ্কর' জীবনযাপন করেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া। এমনকী এই বিল ‘অসাংবিধানিক’ কিংবা ‘সংবিধান বিরোধী’ নয় বলেও দাবি করেছেন বিজেপি সভাপতি। ১১৯ ঘন্টা ধরে ১৪০ জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, লোকসভাতে এমন কথাই জোর গলাতেই বলেন অমিত শাহ।
তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে 'চিন্তিত' মুসলিমদের আশ্বাস দিয়ে অমিত শাহ জানান, এই আইনের ফলে মুসলিমদের কোনও ভয়ের কারণ নেই। তিনি বলেন মুসলমানদের একত্রিত করে বিলের বিপক্ষে সুর চড়ানো হচ্ছে, কিন্তু পড়শি তিন দেশ থেকে যদি কোনও 'সজ্জন' মুসলিম নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন তবে অবশ্যই তা বিবেচনা করা হবে। তবেচ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শাহ বলেন, বাংলাদেশ থেকে আগত এই সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়ে শাহ বলেন, "গোটা বিলের নেপথ্যে রয়েছে মহম্মদ আলি জিন্নার তত্ত্ব মেনে নিয়ে কংগ্রেসের দেশভাগকে সমর্থনের রাজনীতি। ১৯৫০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য নেহেরু-লিয়াকত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তাঁরা কিন্তু ভারতে সুরক্ষিতই ছিলেন, কিন্তু পাকিস্তানে তাঁরা নির্যাতিত হয়েছিলেন। আপনারা কি বলতে চান, পাকিস্তানে বা বাংলাদেশে মুসলিমদের উপরে অত্যাচার হবে? এটা হতে পারে না। ’’
Delighted that the Lok Sabha has passed the Citizenship (Amendment) Bill, 2019 after a rich and extensive debate. I thank the various MPs and parties that supported the Bill. This Bill is in line with India’s centuries old ethos of assimilation and belief in humanitarian values.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 9, 2019
শাহর সাফ জবাব, "শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। এই বিলটি শরণার্থীদের জন্য। ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি না করে চোখ, কান খুলুন। লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষ ভয়ঙ্কর জীবনযাপন করছেন, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁদের সোনালি সূর্যের ভোর উপহার দেবেন।"
Read the full story in English