ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ সেই সঙ্গে রয়েছে চতুর্থ ঢেউয়ের সাবধানবানীও। করোনা সংক্রমণ হঠাৎ করে রাজধানী দিল্লিতে বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে করোনা বিধি জারি করা হয়েছে। মাস্ক না পরলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লির পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মিজোরাম, মহারাষ্ট্রেও করোনা বিধি আরোপ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আবার করোনার থাবা আবার মানুষের ওপর পড়তে শুরু করেছে। রীতিমত উদ্বেগে রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। এর মাঝেই এক নতুন প্রশ্ন আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে!করোনা মানব মস্তিষ্ককে কতটা প্রভাবিত করে এবং এর থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কী করা উচিত?
ডাঃ এমভি পদ্মা শ্রীবাস্তব এ বিষয়ে বলেন ‘করোনার জেরে বহু সময়ই দেখা গিয়েছে রোগীর কোভিড সেরে যাওয়ার পরও বেশ কিছু অন্য রোগ শরীরে দামা বাঁধতে শুরু করেছে’। আগেই গবেষণা প্রমাণ করেছে, যে করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন অঙ্গের কোষকে প্রভাবিত করে। যার জেরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা প্রভাবিত হয়।করোনার জেরে মস্তিষ্কে প্রদাহের কারণে বড়সড় স্নায়ুগত সমস্যা দেখা যায়।
গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কে গিয়ে করোনা ভাইরাস আরও দ্বিগুণ হয়, এমন নয়, তবে তা মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কীয় প্রতিক্রিয়াকে খর্ব করে দেয়। এরফলে বহু সময় ব্রেন ফগ বা স্মৃতিভ্রংশ দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গিয়েছে কিছু কিছু কোভিড রোগীর শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা ধরাই পড়েনি। উলটে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার।
গবেষণায় উঠে এসেছে মৃদু উপসর্গের কোভিডেও অল্প হলেও ক্ষতি হয়েছে আক্রান্তের মস্তিষ্কে। ফলে এখন শুধু ফুসফুস নয়। ডেল্টা-ওমিক্রন মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে আপনার স্নায়ুতন্ত্রকেও। গবেষকরা জানাচ্ছেন, অন্তত এক বছর বয়স বাড়লে যে ধরনের পরিবর্তন হয় মস্তিষ্কের, কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায় ততটাই পরিবর্তন হয়েছে।
গবেষকদের মতে, মহামারীর প্রভাবে অনেক সময়ই মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতিহাসেও এই উদাহরণ রয়েছে। জ্যান্ডির দাবি, ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু’র দাপট ছিল। তার পর ১৯২০-৩০ সালে ‘এনসেফেলাইটিস লেথারজিকা’ মহামারীর আকার নেয়। সেই সময় এই সব রোগে আক্রান্ত যারা হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রেও অনেকেরই মস্তিষ্কের বিকার ঘটতে দেখা গিয়েছিল। আবার করোনার ক্ষেত্রেও সে রকমই হচ্ছে। এবিষয়ে গবেষকরা কয়েকটি কেস রিপোর্ট করেছেন যেখানে দেখা গিয়েছে অনেকেই AIIMS-এ ব্রেন স্ট্রোক নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, যাদের ক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার বা সুগারের কোন লক্ষণ ধরা পড়েনি তারা সবাই কোভিড পজিটিভ ছিলেন। এই প্রবণতা দেখে বোঝা যাচ্ছে কোভিড স্নায়ুতন্ত্রকে ব্যপক ভাবেই প্রভাবিত করতে পারে।
কখন আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে?
এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পরে বা সেরে ওঠার পর যদি আপনি দেখেন আপনি অসহ্য মাথা ব্যথা অনুভব করছেন, রোদে না বেড়িয়েও এই ব্যথা একই রকম থাকছে। প্রায়ই এই সমস্যায় আপনি ভুগছেন তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এর সঙ্গে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটলেও অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ভারসাম্য হারানো, বা স্মৃতি ভ্রম সংক্রান্ত সমস্যা যদি পোস্ট কোভিড কালে দেখা দেয় তাহলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর হালকা শরীর চর্চা করুন, পুষ্টিকর খাবার খান, বেশি পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন, মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন। সেই সঙ্গে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন ধারণ করুন কমপক্ষে ৬ মাস।
আরও পড়ুন: লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী দেশের কোভিড-গ্রাফ, ১৫ হাজার ছাড়াল অ্যাক্টিভ কেস
ল্যানসেট-এ প্রকাশিত গবেষণায় জানানো হয়, দু লাখের বেশি মানুষের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিডের পর ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনির রোগসহ, স্ট্রোকের হার বেড়ে যাচ্ছে। কাজেই লং কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ এবং চিকিৎসা নিতান্তই জরুরি। কোভিড পরবর্তী ক্ষেত্রে অনেককেই ঘিরে ধরছে অবসাদ। যে কোনও কাজ করতে অনিচ্ছা, কাজ শেষ না করে উঠে পড়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতেই পারে। সেক্ষেত্রে জোর করে কিছু শুরু না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে।
কোভিড বিভিন্ন অঙ্গে তার ছাপ রেখে যায়। হৃদপিণ্ড, ফুসফুস থেকে পরিপাকতন্ত্র, সব কিছুর উপরই করোনা ভাইরাস তার আঁচড় রেখে যেতে পারে। তা জানান দেয় কোভিড মুক্ত হওয়ার পরই। এই পোস্ট কোভিড সিম্পটম কিন্তু মারাত্মক জায়গায় যেতে পারে। কোভিড সারার পরও ফুসফুস পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে না অনেক সময়ই। বেশি পরিশ্রম করতে গেলেই সেটা টের পাওয়া যায়। মানুষ হাঁফিয়ে ওঠেন। অক্সিজেন লেভেল ড্রপ করে। এই লক্ষণ দেখলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।