লন্ডনের গার্ডেন মিউজিয়াম দুই মাস আগে, কনস্ট্যান্স ভিলিয়ার্স-স্টুয়ার্টের (১৮৭৭-১৯৬৬) চিত্রকর্মের একটি প্রদর্শনী করেছিল। যার নাম, 'আর্থলি ডিলাইটস'। ১৯১৩ সালে, ভিলিয়ার্স-স্টুয়ার্ট একটি বই প্রকাশ করেছিলেন- 'দ্য গার্ডেনস অফ দ্য গ্রেট মুঘলস'। যা ১৯১২ সালে নিযুক্ত টাউন-প্ল্যানিং কমিটিকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কমিটি তাতে অনুপ্রাণিত হয়েই ভাইসরয় হাউসের বাগানে কাশ্মীরের মুঘল বাগানের মত সিঁড়ি এবং জলাশয় চালু করেছিল।
বাগান বা হর্টিকালচারের উদ্ভাবন অথবা তৈরিতে ধার করা ধারণাকে কাজে লাগানোর দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। যেমনটা, ইউরোপের শহরগুলোর 'জাপানি/চিনা' বাগানে দেখা যায়। সেভাবেই দিল্লিতে ভাইসরয়ের বিশাল বাগানের নামকরণ করা হয়েছিল, 'মুঘল গার্ডেন'। যদিও এই বাগান তৈরির নকশা তৈরি করেছিলেন ইংরেজ আর্কিটেক্টরা।
আজ অবশ্য প্রবণতা বদলে গিয়েছে। বদলে বর্তমানে নামকরণের একটা প্রবণতা খুব দেখা যাচ্ছে। যাতে মুঘল ও ব্রিটিশদের ভারতের ইতিহাস থেকে ছিটকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। যেমন ১৮৬২ সালে তৈরি রেলওয়ে জংশন মুঘলসরাই। ২০১৮ সালে সেই জংশনের নামকরণ করা হয়েছে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে। অথচ, ওই জংশন ব্রিটিশ জমানায় তৈরি। কিন্তু, ব্রিটিশরা তার নাম রেখেছিল মুঘলদের নামে। যদিও, ওই রেল স্টেশনের সঙ্গে মুঘলদের কোনও সম্পর্কই ছিল না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্য এই উদারতা আশা করা অন্যায় বলেই অনেকে মনে করেন। বরং, দেশবাসী এখন অপেক্ষায় রয়েছে, কবে তাঁদের জানানো হবে যে রাষ্ট্রপতি ভবনের সঙ্গে এডউইন লুটিয়েন্সের কোনও সম্পর্কই নেই। ওগুলো সাঁচির স্থপতিরা তৈরি করেছিলেন। অথবা হয়তো বলা হবে যে লালকেল্লা আসলে তোমর রাজপুতরা নির্মাণ করেছিলেন।
আরও পড়ুন- শুধু নাথুরাম না, আরও চার জন গান্ধীজির হত্যায় সাজা পেয়েছিল, জানেন কারা?
আসলে স্থানের নামগুলো হল ইতিহাসের উপাদান। যা একটি বিবরণ দেয়। একটি গল্প বলে। তেমনভাবেই মুঘল গার্ডেন নামটা কাশ্মীরের কথা মনে করিয়ে দিত। যা আসলে ভারতেরই ইতিহাস। এসব ক্ষেত্রে কেউ কেউ ভুলে যাওয়া ভৌগোলিকদের স্মরণ করেন। কেউ আবার সেই স্থানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। যেমন, সাউথ এন্ড রোড নয়াদিল্লির দক্ষিণ সীমা নির্দেশ করে। ওই রাস্তার নাম রাজেশ পাইলট মার্গে পরিবর্তন করলে, তার গুরুত্বই হারিয়ে যায়।
আবার বিশিষ্ট মালয়ালম ও সংস্কৃত পণ্ডিত কে কে নায়ারের কথাই ধরা যাক। যার ছদ্মনাম ছিল 'কৃষ্ণ চৈতন্য'। হাউজ খাসের একটি রাস্তায় তিনি বাস করতেন। যেটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। পরে অবশ্য ওই রাস্তার নাম বদলে করা হয়েছে, 'শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু মার্গ।'
Read full story in English