এক যুগ পর হারানো চাকরি ফেরত পেলেন শিয়ালদহের ম্যাজিস্ট্রেট

'ভুলভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে' এই মর্মে গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্ট মিন্টু মল্লিককে চাকরিতে পুনর্বহাল করে। কিন্তু মাঝে পেরিয়ে গেছে ১২টা বছর।

'ভুলভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে' এই মর্মে গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্ট মিন্টু মল্লিককে চাকরিতে পুনর্বহাল করে। কিন্তু মাঝে পেরিয়ে গেছে ১২টা বছর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অবশেষে মিলল বিচার। স্বস্তিতে মিন্টু মল্লিক

৫ মে, ২০০৭ সাল। কলকাতার লেকগার্ডেন্স স্টেশনে লোকাল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রেলেরই অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা শিয়ালদাহের ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু মল্লিক। ঘটনাচক্রে সেই দিনই শিয়ালদহগামী বজবজ লোকাল অনেক দেরি করে আসে।কেন এত দেরি হল ট্রেনের, রেলওয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে তিনি অন্যান্য কর্মকর্তাদের  বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। সেখানেই গোল বাধে। এই ঘটনায় মিন্টু মল্লিকের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং তাঁকে চাকরি জীবন থেকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়।

Advertisment

আরও পড়ুন, মুকুল-অর্জুনকে কিস্তিমাত, হালিশহর পুনরুদ্ধার করল তৃণমূল

উল্লেখ্য, 'ভুলভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে' এই মর্মে গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্ট মিন্টু মল্লিককে চাকরিতে পুনর্বহাল করে। কিন্তু মাঝে পেরিয়ে গেছে ১২টা বছর। তবে হাইকোর্ট এটাও উল্লেখ করে যে মল্লিকের উদ্দেশ্য প্রশংসনীয় হলেও, তিনি তাঁর ক্ষমতার বাইরে বেড়িয়ে গিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। ৪ জুলাই এই মামলার রায় দিতে গিয়ে হাইকোর্টের তরফে বলা হয়, " মিন্টু মল্লিক নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছেন এক্ষেত্রে। তিনি ভেবেছিলেন একা হাতে চোরাচালানকারী মাফিয়াদের ধরতে সক্ষম হবেন"।

১২ বছর আগে ঠিক কী হয়েছিল? কেন 'মাফিয়া খপ্পরে' পরে চাকরি গেল ম্যাজিস্ট্রেটের?

Advertisment

২০০৭ সালের ৫ মে লেক গার্ডেন্স স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে কলকাতার ট্রেনের দেরি হওয়ার ব্যাপারে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেন মিন্টু মল্লিক। তিনি জানতে পারেন ট্রেনের চালকেরা ট্রেন থামিয়ে মাফিয়াদের সঙ্গে বল খেলতে বসে যান।অনুমতি ছাড়া প্রবেশাধিকার থাকে না জেনেও ট্রেনের চালকের কেবিনে প্রবেশ করেন। তিনি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে হাজির হওয়ার জন্য মোটরম্যান এবং ট্রেন গার্ডকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন এবং ট্রেনটি বিলম্বিত হওয়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করতে বলেন। আদালতে পেশের আগেই পুলিশ ট্রেনের চালক এবং মোটরম্যানকে থানায় নিয়ে যায়। এই ঘটনার কয়েক ঘন্টা পেরোতেই মিন্টু মল্লিকের বিরুদ্ধে রেলওয়ের কর্মচারীরা প্রতিবাদ শুরু করে এবং পরবর্তীতে তা বিক্ষোভের আকার ধারণ করে। এমনকি সেদিন সন্ধ্যেবেলার পর থেকে বন্ধ থাকে শিয়ালদহর সব ট্রেন। বিক্ষোভের জের এতটাই ছিল যে মিন্টু মল্লিকের অবিলম্বে চাকরির উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়।

আরও পড়ুন, সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনল তৃণমূল

প্রথমেই তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মোটরম্যানের কেবিনে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তদন্তে দেখা যায় ট্রেনের বিলম্ব নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের হস্তক্ষেপে কোনও আইনি অনুমোদন নেই। হাইকোর্টের প্রশাসনিক কমিটি সেই আইনের আওতায় ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু মল্লিককে বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণের আদেশ দেয়। হাইকোর্টের দেওয়া এই নিদানকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি কিন্তু তৎকালীন গভর্নর তা নাকচ করে দেন। ফের তিনি ২০১৭ সালে একক বিচারক বেঞ্চে মামলা করেন সেটিও খারিজ হয়ে গেলে দুই বিচারক বেঞ্চে ফের অ্যাপিল করেন এবং মামলাটি নিজেই লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। হাইকোর্ট তার নিজ আদেশের বিরুদ্ধেই কথা বলে তদন্তে পদ্ধতিগত দুর্বলতা স্বীকার করে এবং মিন্টু মল্লিকের কঠোর শাস্তিকে অনায্য বলে ঘোষণা করে।

উল্লেখ্য, বিচারে ঠিক হয় মিন্টু মল্লিক তার ক্ষমতার জায়গা থেকে কোনও অন্যায় করেনি। তিনি কেবল ট্রেনের দেরি হওয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করার কথা বলেছিলেন মাত্র। বিচারে হাইকোর্ট জানায়, মিন্টু মল্লিককে তাঁর এতদিনের মাসিক বেতনের ৭৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে সরকারকে।

Read the full story in English

indian railway