Lynching in Karnataka: অচেনা জায়গায় গিয়ে বাচ্চাদের চকোলেট বিলিয়েছিলেন ওঁরা। ব্যস, তাতেই কারও কারও মনে হল, ওরা ছেলেধরা, চকোলেটের প্রলোভন দেখিয়ে বাচ্চাদের অপহরণ করবে। সঙ্গে সঙ্গে দাবানলের মতো চতুর্দিকে খবর রটে গেল, এলাকায় ছেলেধরা এসেছে। আর এই রটনাকেই ধ্রুব সত্য বলে মেনে নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল জনতা। তারপর? ছেলেধরা সন্দেহে নিরীহ মানুষকে বেদম মার জনতার। যে মারের পরিণাম মৃত্যু! সেই চেনা কাহিনিরই আরও একবার পুনরাবৃত্তি ঘটল এ দেশে। এবার ঘটনাস্থল কর্নাটকের বিদার জেলা, যেখানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপ্রহারে প্রাণ গেল গুগলের সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের। গণপিটুনিতে জখম হয়েছেন আরও তিন জন, যাঁদের মধ্যে একজন কাতারের বাসিন্দা।
গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই মহম্মদ আজম আহমেদ নামে বছর বত্রিশের ওই সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। আজম হায়দরাবাদের মালকপেট এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে সালহাম ইদাল কুবাসি নামে বছর আটত্রিশের কাতারের বাসিন্দা গণপিটুনিতে জখম হয়েছেন বলে খবর। সালহামের মতোই গুরুতর জখম হয়েছেন হায়দরাবাদের বাসিন্দা নুর মহম্মদ ও মহম্মদ সলমন। বিদারের সরকারি হাসপাতালে প্রথমে চিকিৎসার পর তাঁদের হায়দারাবাদে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
কর্নাটকের বিদার জেলার গণপিটুনির ঘটনাতেও গুজব ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে উঠেছে সেই হোয়াটস অ্যাপই। ছেলেধরা সন্দেহে চারজনের ছবি ছড়ানো হয় হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমেই। এই ছবি শেয়ারের পিছনে তিনজন ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন, Lynchings in India: জনতা যখন খুনি!
আক্রান্ত কাতারের বাসিন্দা কুবাসির স্ত্রী জাইবুন্নিসা জানান, ‘‘শুক্রবার সকালে বিদারে ওঁরা একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। জমি কেনার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠানের পর জমি দেখতে গিয়েছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ ঔরাদ তালুকার মুরকি গ্রামে একটি স্কুলের কাছে ওঁরা চা পানের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। স্কুলের বাচ্চাদের দেখে বিদেশি চকোলেট দেন সালহাম। এরপরই একজন চিৎকার করে জানান যে, অচেনা ব্যক্তিরা বাচ্চাদের চকোলেট দিয়ে ভোলাচ্ছে। ব্যস সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন লোক জড়ো হয়ে যায়।’’ এরপর কী হয়? এর উত্তরে কুবাসির স্ত্রী বলেন,‘‘বিপদ আঁচ করে, গাড়ি করে তক্ষুণি ঘটনাস্থল থেকে পালান ওঁরা। কিন্তু ততক্ষণে ওঁদের ফোটো কেউ তুলে হোয়াটস অ্যাপে ছড়িয়ে দেন। মেসেজে বলা হয় যে, এলাকায় ছেলেধরা এসেছে। এই গুজবসহ চারজনের ফোটো মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।’’
এ ঘটনা প্রসঙ্গে মালেকপত এলাকার বিধায়ক আহমেদ বালালা জানান,‘‘আক্রান্তদের ধরতে পাশের গ্রামে রাস্তায় গাছ ফেলেন গ্রামবাসীরা। এটা দেখে স্পিড বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা চালান আক্রান্তরা। গাড়ি চালাচ্ছিলেন আজম। কিন্তু জোরে গাড়ি চালাতে গিয়েই গর্তের মধ্যে পড়ে যায় গাড়ি। এরপরই গাড়ি থেকে তাঁদের বের করে বেদম মারধর করে জনতা।’’ আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করে ওই বিধায়ক জানান, ‘‘আক্রান্তরা জানিয়েছেন যে, দু’জন পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে আসেন, কিন্তু জনতার রোষকে সামাল দিতে পারেননি তাঁরা।’’ তবে আজমের মৃত্যু গাড়ি দুর্ঘটনার জেরে নাকি গণপিটুনিতে , তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।