দেশে গণপিটুনির ঘটনা এখন কার্যত রোজনামচা। কখনও চোর সন্দেহে, কখনও বা ছেলেধরা সন্দেহে, বা গরুচোর সন্দেহেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনতার রোষের বলি হয়েছেন অনেকেই। গণপিটুনি ঠেকানো নিয়ে সরব হয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতও। কিন্তু কিছুতেই সামাজিক এই ব্যাধিকে রোখা যাচ্ছে না। তাই এবার গণপিটুনি ঠেকাতে নতুন আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে মোদি সরকার। ভারতীয় দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে সংশোধনী করার কথা ভাবা হচ্ছে।
গণপিটুনিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশেষ খসড়া রিপোর্ট বানিয়েছে একটি দল। গণপিটুনিতে অভিযুক্তদের জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করে বিশেষ আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছে ওই দল। পাশাপাশি, গণপিটুনিতে আক্রান্তদের কেন্দ্রের তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। গণপিটুনি রোখা নিয়ে গত মাসের ২৩ তারিখ বিশেষ কমিটি তৈরি করা হয়। যে কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গৌবা। গণপিটুনি নিয়ে ওই খসড়া রিপোর্ট ওই কমিটিকে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই ওই কমিটি তৈরি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। চলতি মাসের ২১ তারিখ গণপিটুনি নিয়ে ওই প্রস্তাব কয়েকজন মন্ত্রীর কাছে পেশ করার কথা কমিটির।
আরও পড়ুন, গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে ফের মৃত্যু আসামে
গণপিটুনি সংক্রান্ত খসড়া রিপোর্ট বানানোর আগে তিন সদস্যের বিশেষ দল ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছে। প্রসঙ্গত, এই রাজ্যগুলিতেই গণপিটুনির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে।
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, ওই দলে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব এস সি এল দাস ও প্রবীণ বশিষ্ঠ। এছাড়াও দলে রয়েছেন নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর ডিজি অভয়। গণপিটুনির হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য কোনও আলাদা আইন প্রণয়ন করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা করেছে ওই দল। কয়েকদিনের মধ্যেই গণপিটুনির ওই খসড়া রিপোর্ট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নেবে বলে সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে।
এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে চূড়ান্ত রিপোর্ট এলে, তা পাঠানো হবে কয়েকজন মন্ত্রীর কাছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকরি, আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ ও সমাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রী তাহওয়ার চাঁদ গেহলতের কাছে ওই রিপোর্ট পাঠানো হবে। সবশেষে ওই রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গো রক্ষক বাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেন কংগ্রেস নেতা তেহসিন পুনাওয়ালা। ওই পিটিশন দেখে এধরনের অপরাধ ঠেকাতে সংসদে নতুন আইন আনার কথা বলা হয়ছিল সুপ্রিম কোর্টের তরফে।