রাম নবমীর মিছিল ঘিরে অশান্তির একদিন পরই উপদ্রবকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিল মধ্যপ্রদেশ প্রশাসন। রাম নবমীতে খারগোন এলাকায় ব্যাপক অশান্তি হয়। যার জেরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়। ঘটনার একদিন পর সোমবার মধ্যপ্রদেশ সরকারের জেলা প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করে ১৬টি বাড়ি এবং ২৯টি দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।
ভোপালে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সি চৌহান বলেছেন, দাঙ্গাকারীদের শায়েস্তা করতে ক্লেইম ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র উপদ্রবকারীদের চরম হুঁশিয়ারি দেন। বলেন, যে যে ঘর থেকে পাথর ছোড়া হয়েছে সেগুলিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হবে। অন্তত ১০টি বাড়িতে রম নবমীর দিন আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। খারগোনের পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ চৌধুরি-সহ ১০-১২ জন গুরুতর জখম হন।
সোমবার সকাল থেকেই বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন। ছোটে মোহন টকিস এলাকায় চারটি অবৈধ বাড়ি ভাঙা হয়। এর পর ঔরঙ্গপুরা, খাসখাসওয়াড়ি, গণেশ মন্দির এবং তালাব চকের কাছে বেশ কিছু বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। তালাব চক এলাকাতেই রবিবার রাম নবমীর মিছিল ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। তার পর বিভিন্ন এলাকায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার ৪৫টি সম্পত্তি ভাঙার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি বাড়ি ভাঙা হয়েছে খাসখাসওয়াড়ি এলাকায়। সেখানে ১২টি ঘর, ১০টি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভাওসার মহল্লায় রবিবার ব্যাপক পাথরবৃষ্টি হয় রাম নবমীর মিছিলে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে মহকুমা শাসক মিলিন্দ ধোকে বলেছেন, "সমস্ত দোকান-ঘর অবৈধ বলে ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়ি-দোকানগুলি দখল করা জায়গায় তৈরি হয়েছিল। সেখানে পাথর ছোড়ার ঘটনার খবর এসেছিল, তাই সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"
আরও পড়ুন রামনবমীর মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার, এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার ৭৭
তালাব চক এলাকায় ১২টি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেগুলির মধ্যে ৮টি মুসলিমদের। বাকি চারটি হিন্দুদের। ১২টি দোকান খারগোন জামা মসজিদ চত্বরে তৈরি হয়েছে, সবকটিই মসজিদ কমিটির অধীনে রয়েছে। এক দোকানি রফিক মহম্মদ দোকান ভাঙার মুহূর্তে সন্ধের আলোয় যেটুকু পেরেছেন জিনিসপত্র তুলে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেছেন, "আমি তো দাঙ্গা সমর্থন করি না। আমি চাই দাঙ্গাকারীরা গ্রেফতার হোক। কিন্তু আমার দোকান কেন ভাঙা হল, আমার ১৭ জনের পরিবার, আমার এবার চলবে কী করে? মুখ্যমন্ত্রী কি উত্তর দিতে পারবেন?"
এক হিন্দু দোকানি নরেন্দ্র সুরেশচাঁদ গুপ্তা বলেছেন, "আমি মসজিদ কমিটির কাছ থেকে দোকানটি ভাড়ায় নিয়েছিলাম। আমাদের কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি। কমিটিকে নোটিস দেওয়া হলে অন্তত জিনিসপত্র সরাতে পারতাম। দোকান ভাঙার একঘণ্টা আগে জানতে পারি। ততক্ষণে বুলডোজার চলে এসেছে। আমি কাছেই থাকি, খবর পেয়ে ছুটে আসি। যেটুকু পেরেছি সরিয়ে নিতে পেরেছি।" ডিআইজি তিলক সিং জানিয়েছেন, রবিবারের ঘটনায় ১১টি এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং ৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।