ভোটের ফল প্রকাশের দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সরকার গঠন নিয়ে টানাপোড়েনে বেসামাল মহারাষ্ট্রে তাঁর সুপারিশেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। বিজেপি, শিবসেনাকে সরকার গঠনের জন্য নির্দিষ্ট সময় দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে এনসিপি-কেও ডেডলাইন বেঁধে দেন তিনি। কিন্তু সেই ডেডলাইন শেষ হওয়ার আগেই রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য তদ্বির করে খবরের শিরোনামে এসেছেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। কিন্তু, কে এই ভগৎ সিং কোশিয়ারি? কেমন ছিল তাঁর রাজনৈতিক অতীত?
ভগৎ সিং কোশিয়ারি কে?
১৯৪২ সালের ১৭ জুন উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার পালানাধুরা চেতবগড়ে জন্মগ্রহণ করেন ভগৎ সিং কোশিয়ারি। ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯৬৪ সালে আলমোরা বিশ্বিবিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এ সময় কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন কোশিয়ারি। ১৯৭৯-৮২, ১৯৮২-৮৫ ও ১৯৮৮-৯১ সালে কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্বও করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে জারি রাষ্ট্রপতি শাসন
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। আরএসএস ও জন সংঘের অন্যান্য নেতাদের মতো জরুরি অবস্থার সময়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন কোশিয়ারিও। ১৯৭৫ সালের ৩ জুলাই আলমোরায় আটক করা হয়েছিল কোশিয়ারিকে। ফতেগড় সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়েছিল তাঁকে। ১৯৭৭ সালের ২৩ মার্চ তাঁকে মুক্ত করা হয়।
কোশিয়ারির রাজনৈতিক উত্থান
১৯৯৭ সালের মে মাসে উত্তরপ্রদেশের বিধায়ক পদে নির্বাচিত হন কোশিয়ারি। ২০০০ সালে উত্তরপ্রদেশ ভাগের পর তৎকালীন উত্তরাঞ্চলের (এখন উত্তরাখণ্ড) বিদ্যুৎ, সেচ, আইন ও বিধানসভার পরিষদীয় মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান তিনি। কোশিয়ারির রাজনৈতিক কেরিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট আসে এর একবছর পর। তখন নিত্যানন্দ স্বামীকে সরিয়ে নয়া মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। সে সময় তাঁর মন্ত্রিসভায় ছিলেন রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক। উল্লেখ্য, পোখরিয়াল বর্তমানে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ও উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: আরটিআই-এর আওতায় সুপ্রিম কোর্ট-প্রধান বিচারপতিও? চূড়ান্ত রায় কাল
তবে ২০০২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের জেরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় কোশিয়ারিকে। এরপর ২০০৭ সাল পর্যন্ত উত্তরখাণ্ডের বিধানসভার বিরোধী নেতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে সে রাজ্যে যখন ক্ষমতায় ফেরে বিজেপি, তখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোশিয়ারিই ফিরবেন বলে জল্পনা ছড়ায়। কিন্তু সেবার শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদে ভূবন চন্দ্র খান্ডুরিকেই বেছে নেয় গেরুয়া বাহিনী। ২০০৮ সালে উত্তরাখণ্ড থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন ভগৎ সিং কোশিয়ারি। এরপর ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে নৈনিতাল-উধমসিং নগর থেকে জয়ী হন তিনি। এছাড়া, একদা উত্তরাখণ্ডে বিজেপি সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন কোশিয়ারি। চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল পদে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়।
রাজনীতিক নয়, সাংবাদিক কোশিয়ারি
অনেক আরএসএস নেতার মতোই কোশিয়ারিও অবিবাহিত। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি যেমন শিক্ষকতা করেছেন, তেমনই সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেছেন। রাজা ইন্টার কলেজে কয়েক বছর অধ্যাপনাও করেছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে পিথোরগড়ে সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘পার্বত পীযূষ’-এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কোশিয়ারিই। তাঁর ২টি বইও প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া, বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে তিনি সে সময় প্রতিবেদনও লিখেছিলেন।
Read the full story in English