সংসদে প্রশ্ন জিজ্ঞাসার জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ করে, বিজেপির লোকসভা সাংসদ নিশিকান্ত দুবে তৃণমূল (টিএমসি) সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে হাউস এথিক্স কমিটির সামনে তুলেছেন। দ্বারস্থ হয়েছেন লোকপালেরও। দুবের অভিযোগ মৈত্র 'অনুগ্রহ' গ্রহণ করে আদানিদের সংস্থার বিরুদ্ধে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। তাঁকে সেই অনুগ্রহ বা ঘুষ দিয়েছেন ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানি। এই প্রসঙ্গে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে একটি তদন্তের দাবিতে পেশ করা চিঠিতে দুবে বলেছেন যে মামলাটি ২০০৫ সালে নগদ-এর বিনিময়ে প্রশ্ন কেলেঙ্কারির কথা মনে করিয়ে দেয়।
১৮ বছর আগের কেলেঙ্কারি
১৮ বছর আগে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের প্রথম মেয়াদের একবছর পর, ডিজিটাল পোর্টাল কোবরাপোস্ট একটি স্টিং অপারেশন উন্মোচন করে। নাম ছিল, অপারেশন দুর্যোধন। ওই অপারেশনে এমন সাংসদদের কীর্তি ফাঁস করা হয়, যাঁরা একটি কোম্পানির প্রচার, অর্থের বিনিময়ে হাউসে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে রাজি হয়েছিলেন। কোবরা পোস্ট দাবি করে, তারা আট মাস ধরে তথ্য সংগ্রহ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ৫৬টি ভিডিও, ৭০টি অডিওটেপ এবং ৯০০টি ফোন কল।
স্টিং অপারেশন
কোবরা পোস্টের সাংবাদিক অনিরুদ্ধ বাহল ও সুহাসিনী রাজ 'নর্থ ইন্ডিয়ান স্মল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (NISMA)' নামে একটি কাল্পনিক লবিং সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছিলেন। আর, বিভিন্ন সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁদের টোপে বেশ কয়েকজন সাংসদ দলীয় লাইন না-মেনে সংসদে প্রশ্ন করতেও রাজি হয়েছিলেন। এই সাংসদরা হলেন- বিজেপির ছতরপাল সিং লোধা (ওড়িশা), আন্না সাহেব এম কে পাতিল (এরন্দোল, মহারাষ্ট্র), চন্দ্রপ্রতাপ সিং (সিধি, মধ্যপ্রদেশ), প্রদীপ গান্ধী (রাজনান্দগাঁও, ছত্তিশগড়), সুরেশ চান্দেল (হামিরপুর, হিমাচল প্রদেশ) এবং জি মহাজন (জলগাঁও, মহারাষ্ট্র)। এছাড়াও, তিনজন বিএসপি সাংসদও কোবরা পোস্টের শিকার হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন, নরেন্দ্রকুমার কুশওয়াহা (মির্জাপুর, উত্তরপ্রদেশ), লালচন্দ্র কোল (রবার্সটগঞ্জ, উত্তরপ্রদেশ) এবং রাজা রামপাল (বিলহাউর, উত্তরপ্রদেশ) এবং আরজেডির মনোজ কুমার এবং কংগ্রেসের রামসেবক সিং। এর মধ্যে লোধা ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ।
ফুটেজ সম্প্রচার হয়েছিল
২০০৫ সালের ১২ ডিসেম্বর, আজতক টিভি চ্যানেল স্টিং থেকে ভিডিও ফুটেজ সম্প্রচার করে। অভিযোগ করা হয়, যে এমপিরা অর্থ গ্রহণ করছেন। ফুটেজটি সম্প্রচারের সঙ্গেই, লোকসভার স্পিকার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করেছিলেন। কমিটিতে ছিলেন সাংসদ পবনকুমার বনসল (চেয়ারম্যান, কংগ্রেস), বিজয়কুমার মালহোত্রা (বিজেপি), মহম্মদ সেলিম (সিপিএম), রামগোপাল যাদব (সমাজবাদী পার্টি) এবং সি কুপ্পুসামি (কংগ্রেস)। মালহোত্রা এই বিষয়ে একটি ভিন্নমত জানিয়ে নোট দিয়েছিলেন যে, 'আমি এমন একটি নজির স্থাপনের পক্ষ হতে চাই না যার দ্বারা একজন সদস্যকে যথাযথ পদ্ধতি গ্রহণ না-করেই হাউস থেকে বহিষ্কার করা যেতে পারে।' মালহোত্রা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, 'শুধুমাত্র একটি আদালতই সুপারিশকৃত পদক্ষেপের আইনি অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে।
আরও পড়ুন- তাঁর বিরুদ্ধে হিরানন্দানির হলফনামা, কী আইনি যুক্তি তুললেন মহুয়া মৈত্র?
সাংসদদের বহিষ্কার
কমিটির ফলাফলের ভিত্তিতে, তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ২৩ ডিসেম্বর একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন যে, ১০ জন লোকসভা সাংসদের আচরণ 'অনৈতিক এবং সংসদ সদস্য হিসেবে অযাচিত। সেই জন্য তাঁরা লোকসভার সদস্য হিসেবে বহাল থাকার অযোগ্য। তার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ওই সাংসদদের লোকসভার সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হবে। সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু, বিজেপি বিক্ষোভ দেখায়। বিজেপি সদস্যরা সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন। খোদ তৎকালীন বিরোধী দলনেতা এলকে আদবানি সাংসদদের বহিষ্কারকে, 'মৃত্যুদণ্ড'র সঙ্গে তুলনা করেন। অভিযুক্ত সাংসদদের মধ্যে লোধা ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ। রাজ্যসভাও পরে লোধাকে বহিষ্কার করেছিল। সাংসদ করণ সিংয়ের নেতৃত্বে সংসদের নীতি কমিটির তদন্তের পরে, সংসদ ভবনের 'সর্বোচ্চস্তরের সম্মান ও মর্যাদা রাখার জন্য' এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।