মাঝেরহাটে ব্রিজ দুর্ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুলিশ। ইতিমধ্যেই ব্রিজ দুর্ঘটনায় আলিপুর থানায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশ। জামিন অযোগ্য ধারায় অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবার ঘটনার তদন্তে ঝাঁপিয়ে পড়ল লালবাজার। শহরে সেতু বিপর্যয়ের ঘটনায় গঠিত হল বিশেষ তদন্তকারী দল। একইসঙ্গে দুর্ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব হাতে নিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগ। এদিন লালবাজারের তরফে গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, "বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়া হয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগ এ ঘটনার তদন্ত করছে। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।"
অন্যদিকে এদিনও মাঝেরহাটে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। ব্রিজের বেহাল স্বাস্থ্য কাঠামো নিয়েই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা আঙুল তুলেছেন বলে জানা গিয়েছে। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, ১০ মাস আগেও মাঝেরহাট ব্রিজে একটা ফাটল দেখা গিয়েছিল। সেসময় সেই ফাটলে পিচের প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর আর সেভাবে ব্রিজের স্বাস্থ্য কাঠামো বদল করা হয়নি। আর তার জেরেই শেষমেশ সেতুর এই পরিণতি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মেট্রোর কম্পনের জেরেই কি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল মাঝেরহাট ব্রিজ? এ নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত। বুধবার দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানান, মেট্রোর কাজে কম্পনের জেরেই ব্রিজে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। সেই একই কথাই বৃহস্পতিবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে আবার বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মমতা বলেন, "মেট্রোর কাজের জেরে অনেকটা সমস্যা হয়েছে। মুখ্যসচিবের তদন্ত কমিটি রিপোর্ট যাচাই করে দেখবে। সেই তদন্তের রিপোর্ট না মেলা পর্যন্ত মেট্রোর কাজ বন্ধ রাখা হবে।" অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেট্রো তত্ত্ব নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "পিঠ বাঁচাতে মেট্রোর অজুহাত দেওয়া হচ্ছে।" মেট্রোর কাজে কম্পনের জেরেই ব্রিজের ক্ষতি হওয়ার কারণ অবশ্য পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন, মাঝেরহাট ব্রিজ দুর্ঘটনায় মৃত বেড়ে ৩
এদিন নবান্নে মাঝেরহাট ব্রিজ দুর্ঘটনা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মমতা জানান যে, মাঝেরহাটে ব্রিজ দুর্ঘটনার পর বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও সেতু নজরদারির জন্য বিশেষ সেল তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ২০ চাকার গাড়ি আর ব্রিজে চালানো হবে না বলেও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে, শহরে সেতু বিপর্যয় প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে বিঁধে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "ফাটলে পিচ দেওয়ায় ব্রিজ উঁচু হয়ে গিয়েছিল। তাপ্পি মারার জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কেবল সমস্যা থেকে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়েই এমন পরিণতি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কাজ হলে এমনটা হত না।"