Advertisment

ব্রিজ বিপর্যয়ের জেরে এবার পুজোয় বাড়তি যান যন্ত্রণা?

মাঝেরহাট ব্রিজ বিপর্যয়ের জেরে শহরের ওই অংশে যান যন্ত্রণায় কাতর শহরবাসী। ভোগান্তি কমাতে পুজোয় কী ভাবছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ? কী বলছেন পুজো উদ্যোক্তারা?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kolkata traffic police, কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ

সেতু বিপর্যয়ের জেরে পুজোয় কি এবার বাড়তি যানজটের আশঙ্কা? ফাইল ছবি।

এ তো গোদের উপর বিষফোঁড়া! এখনই যদি এহেন হাল হয় তবে পুজোয় কী হবে? মাঝেরহাট ব্রিজ বিপর্যয়ের পর এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে শহরের এই অঞ্চলের অলিগলিতে। সেতু ভেঙে পড়ায় বেহালার যেন আরও বেহাল অবস্থা।

Advertisment

ঘুরপথে যাচ্ছে গাড়ি। যার জেরে হিমশিম দশা পথচলতি মানুষের। বেহালা, নিউ আলিপুরের দিকে পৌঁছতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিরক্তির ছাপ চোখে পড়ছে বাস-অটোয় বসা যাত্রীদের মুখে। ব্রিজ কবে সেরে উঠবে? সে প্রশ্নের উত্তর আপাতত দূর অস্ত। এদিকে দরজায় কড়া নাড়ছে পুজো। মানেই তো সেই চেনা ভিড়। পুজোর সময় তো এমনিতেই এই এলাকার রাস্তাঘাটের বারোটা বেজে যায়। এবার সেতু বিপর্যয়ের জেরে পুজোয় বেহালা এলাকার রাস্তার হাল কী হবে? এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আম-আদমি থেকে পুজো উদ্যোক্তারা।

পুজোয় জনসমাগমের নিরিখে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার চল চিরকালীন। মাঝেরহাটে সেতু বিপর্যয়ের জেরে কি এবার বেহালা, নিউ আলিপুর এলাকায় যানজটের ভোগান্তিতে ঠাকুর দেখতে নিমরাজি হবেন দর্শনার্থীরা? জবাবে বেহালা নূতন দলের আহ্বায়ক সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, "ভিড় তো খানিকটা কমবেই। কারণ বেহালা আসতে গেলেই যদি ৩-৪ ঘণ্টা লেগে যায়, তবে সেইসময়ে অন্য জায়গার ঠাকুর দেখা হয়ে যাবে। তাছাড়া পুজোর সময় এত ঝামেলা কেউ চান না।"

বেহালায় ঠাকুর দেখতে যাওয়া নিয়ে এই মুহূর্তে অনেকেই কিন্তু কিন্তু করছেন। যেমন হাওড়ার যুবক অমিত কর বললেন, "প্রতিবছরই তো বেহালার পুজো দেখতে গেলে ওই ব্রিজ দিয়ে যেতাম। এবার তো কী রুট হবে জানি না। ঘুরপথে যেতে হবে, কিন্তু তাতে খুব ঝক্কি। খুব সমস্যা হবে বোধহয়। দেখি কী হয়।’’ শুধু অমিত নন, তাঁর মতো আরও অনেক প্যান্ডেল হপাররাই চিন্তায় রয়েছেন এবারের ঠাকুর দেখার প্ল্যান নিয়ে।

majherhat bridge collapse, মাঝেরহাটে ব্রিজ দুর্ঘটনা মাঝেরহাটে ব্রিজ বিপর্যয়ের জেরে বেহালা এলাকায় বাড়তি দুর্ভোগ।

সেতু বিপর্যয়ের জেরে দর্শনার্থীদের সমস্যার কথা মানছেন হরিদেবপুর ৪১ সংঘের চিফ কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর চট্টোরাধ্যায়। বললেন, "এমনিতেই এদিকে রাস্তায় চাপ থাকে, আরও চাপ বেড়ে গেল। পুজোর বিচারকরা আমাদের মণ্ডপে আসতে পারবেন কী না সন্দেহ রয়েছে।" পুজোয় যানবাহনের ভোগান্তি নিয়ে দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে খানিকটা চিন্তায় দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম হাইভোল্টেজ পুজো, নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘ। সেতু বিপর্যয়ের জেরে সুরুচির মণ্ডপ-প্রতিমা দর্শনার্থীদের ঝক্কি প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা স্বরূপ বিশ্বাস বললেন, "সমস্যা তো একটা হবেই। আমাদের হাতে কিছু নেই। আশা করব, প্রশাসনের তরফে চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে ট্রাফিক সমস্যা না হয়।"

আরও পড়ুন, শহর জুড়ে ‘ব্রিজ আতঙ্ক’, দেখুন কী হাল শহরের অধিকাংশ সেতুর

kolkata traffic police, কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ যানজটে বেহালাবাসীর দুর্ভোগ নিয়ে ফেসবুকে ঘুরছে এই মিম।

তবে মাঝেরহাটে ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় তাঁদের পুজো দেখতে এলে দর্শনার্থীদের কোনও সমস্যা হবে না বলেই মনে করছে চেতলা অগ্রণী পুজো কমিটি। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে চেতলা অগ্রণীর সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ খুব ভাল কাজ করছে। এত সুন্দর ওরা কাজ করবে, ভাবতে পারিনি। কীভাবে এত সুন্দরভাবে ট্রাফিক পরিচালনা করছেন বুঝতে পারছি না। এভাবে কাজ করতে থাকলে, কোনও অসুবিধে হবে না।’’

কিন্তু সেতু দুর্ঘটনার পর ঘুরপথে গাড়ি যাতায়াতের জেরে রোজই যাত্রীরা ক্ষোভ জানাচ্ছেন ভোগান্তি নিয়ে। পুজোর সময় কীভাবে ওই এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা সামাল দেওয়া হবে? এ প্রসঙ্গে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "পুজোর সময় আলাদা করে পরিকল্পনা তো থাকছেই। আলাদা সার্কুলেশন তো জারি করা হবেই। এ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।" পুজোর সময় দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ট্রাফিক পুলিশকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে সুরুচি সংঘও। স্বরূপবাবু জানান, "ট্রাফিক পুলিশের তরফে কোনও সাহায্য চাইলে নিশ্চয়ই করব। প্রয়োজনে ভলান্টিয়ারও দিতে পারি।" ট্রাফিক সমস্যা কাটাতে হরিদেবপুর ৪১ পল্লির চিফ কোঅর্ডিনেটর দীপঙ্কর বাবুর আর্জি, "পুজোর ক’টা দিন যাতে এদিকে রাস্তায় যেন লরি না ঢোকে। ট্রাফিক পরিস্থিতি যাতে ঠিক রাখা হয়, এটাই বলব প্রশাসনকে।"

kolkata traffic police, কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ ব্রিজ বিপর্যয়ে পুজোয় যানজট এড়াতে পরিকল্পনা করছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। ফাইল ছবি।

আরও পড়ুন, এরপর শহরের কোন সেতু? এখনও দায় অস্বীকার মন্ত্রীর

অন্যদিকে, মাঝেরহাটে ব্রিজ বিপর্যয়ের জেরে হিমশিম দশা নিত্যযাত্রীদের। ঘুরপথে গাড়ি যাতায়াত করায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকেই। এরকমই অভিজ্ঞতা খড়দহের বাসিন্দা আত্রেয়ী সমাদ্দারের, যিনি রোজ খড়দহ থেকে নিউ আলিপুর যাতায়াত করেন। তিনি বললেন, "অফিস আসতে এখন খুব সমস্যা হয়। তাছাড়া আমি কালীঘাট থেকে অটোয় করে আসি। ব্রিজ দুর্ঘটনার পর, অটোচালকরা ১৪ টাকার বদলে ২০ টাকা ভাড়া চাইছে। থেকে থেকেই রাস্তা ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। আগে যে সময় লাগত অফিস পৌঁছতে, এখন তার থেকে অনেক বেশি সময় লাগছে।’’ ব্রিজ বিপর্যয়ের জেরে অটো চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আরও এক যাত্রী। গৌতম বোস নামের ওই যাত্রী বললেন, "অটোভাড়া ১৫ থেকে ৩০ টাকা হয়ে গিয়েছে। তবে অটোচালকদের দাবিও খুব একটা ফেলনা নয়। কারণ ওঁরা যে রুটে গাড়ি চালান, তার বদলে ঘুরপথে যেতে গিয়ে অনেকটা সময় লাগছে।"

অন্যদিকে, যে পথে গাড়ি ঘোরানো হচ্ছে, সে রাস্তাও খুব একটা ফিট নয়। এ প্রসঙ্গে বেহালা চৌরাস্তার বাসিন্দা সুদীপ দেব বললেন, "সেতু ভেঙেছে, এটা দুর্ঘটনা। কিন্তু যে বিকল্প রাস্তাগুলো রয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও খারাপ। যার ফলে বিকল্প পথ দিয়ে যেতে হলে আরও সমস্যা হচ্ছে। বিকল্প রাস্তাগুলো ঠিক করতে হবে। তা না হলে তো ভোগান্তি হবেই।"

বিকল্প রাস্তার বেহাল দশা প্রসঙ্গে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের ওই আধিকারিক বলেলন, "কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কীভাবে সমস্যা মোকাবিলা করা হবে, সে নিয়ে ভাবা হচ্ছে।"

Bridge Collapse kolkata police kolkata news Durga Puja 2019
Advertisment