ছ'বছর পড়াশোনার পর জানা গিয়েছে, কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই মালদার গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বা GKCIET-র। এমনকী ছাত্রছাত্রীদের কলেজ কর্তৃক যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে, তার কোনও বৈধতাই নেই। সুতরাং চাকরী বা উচ্চশিক্ষা কোনো কিছুর জন্যই পরবর্তী পদক্ষেপই নিতে পারছেন না তাঁরা।
ইতিমধ্যেই কিছু ছাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির পরীক্ষায় পাস করেও ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের সময়ে বাদ পড়ে গিয়েছেন। কারণ সর্বত্রই ওই সার্টিফিকেট জাল বলে অভিহিত হয়েছে। বৈধ সার্টিফিকেটের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। ইতিমধ্যেই ৪০০ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। ২১০ ঘণ্টা ধরে চলছে রিলে অনশন। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ছাত্রী নুসরত বানু।
কলকাতার ফুটপাথে তাঁদের দাবি মেলে ধরলেন মালদার GKCIET-র ছাত্রছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ অনশন, জাতীয় সড়ক অবরোধ, এবং রেল অবরোধের পরও কোনও সমাধান না মেলায় ছাত্রছাত্রীরা শেষে শরণাপন্ন হয়েছিলেন রাজ্যপালের। গত সোমবার বৈধ সার্টিফিকেটের দাবি জানিয়ে একটি আবেদন পত্রও জমা দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে চিঠির কোনও উত্তর আসেনি এখনও।
তাই কলকাতার রানু ছায়া মঞ্চে ধর্নায় বসেছেন ইঞ্জিয়ানিং কলেজের ৪০ জন ছাত্রছাত্রী, জানিয়েছেন, কোনও সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন তাঁরা, প্রয়োজনে আন্দোলন আরো জোরালো হবে। আন্দোলনকারী ছাত্র সাহিন পারভেজ বলেন, "জনগণের কাছে অনুরোধ, তাঁরাও আমাদের পাশে দাঁড়ান, আর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, বিষয়টি তাঁরা দেখুন। ইতিমধ্যেই আমরা রাজ্য সরকারকেও জানিয়েছি বিষয়টি।"
নিয়ম মাফিক মড্যুলার প্যাটার্নে চলত এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। মাধ্যমিক পাশের পর প্রথম দু বছরের ভোকেশনাল কোর্স, তারপর দু বছরের ডিপ্লোমা এবং তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং (বি টেক) পড়ার সুযোগ, এই ছিল রুটম্যাপ। রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী, সকলেরই পদধূলী পড়েছে মালদার স্বনামধন্য এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। অথচ কলেজের কোনও সরকারী রেজিস্ট্রেশনই নেই।
আরও পড়ুন: লোকচক্ষুর অন্তরালে আরও একটি অনশন আন্দোলনের গল্প, এবার মালদায়
ইতিমধ্যে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট নিয়ে কেউ কেউ চাকরির জন্য চেষ্টা চালালেও সার্টিফিকেট "জাল" বলে প্রতিবারই ফিরে আসতে হয় তাঁদের। স্পষ্ট জানানো হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত দুবছরের ডিপ্লোমার আগে দু বছরের ITI অথবা 12th ভোকেশনাল পাস না করবেন, ততক্ষণ দুবছরের ডিপ্লোমা বৈধ নয়।
যেহেতু ডিপ্লোমার আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ দুবছরের সার্টিফিকেট কোর্স করিয়েছেন, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে কোনও উত্তর দিতে পারেননি কেউ বলে দাবি ছাত্রছাত্রীদের। জুলাইয়ের প্রথম দিকেই রেজিস্ট্রার সাফ জানিয়ে দেন MAKAUT পুরোনো ছাত্রছাত্রী, অর্থাৎ ২০১০ ব্যাচের কোনও দায়িত্ব নিতে পারবে না। যদিও ২০১৮-র পর সরকারি অ্যাফিলিয়েশন পেয়েছে কলেজ।
সব মিলিয়ে আপাতত ভুয়ো কলেজের ছাত্র, এই পরিচিতি নিয়েই দিন গুনছেন ওই ৮০০ জন, সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত! আদৌ কি মিলবে বৈধ সার্টিফিকেট? কোনও উত্তর জানা নেই।