দেশজুড়ে ঈদের প্রস্তুতি তুঙ্গে। মেনু থেকে ওয়ার্ডরোব, রেস্তোরাঁ থেকে রাজপথ, সেজেছে সবাই। অথচ উৎসবের দিনেও রানু ছায়া মঞ্চই একমাত্র ঠিকানা শাইন, মারুফ, ইমদাদের। বাড়ি থেকে ফোন এসেছে অনেকবার, তবু এ বছর ওঁদের ঈদের দিনটা কাটবে রাস্তার ধারেই। ফেরা হবে না, কারণ আন্দোলন চলছে। বৈধ সার্টিফিকেটের দাবীতে গত ১৪ দিন ধরে রানুছায়া মঞ্চের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছেন মালদার গনিখান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (GKCIET) প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী। একদল রয়েছেন কলকাতায়, অন্য দল মালদায়। অবস্থান, অবরোধ, গন কনভেনশনেও কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। ছাত্রদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী থেকে রাজ্যপাল, একাধিকবার বিভিন্ন সরকারি মহলের দ্বারস্থ হওয়ার পরও নীরব প্রশাসন।
আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন নতুন বর্ষের ছাত্ররাও। তাঁরা কলেজের পরীক্ষা বয়কট করেছেন ইতিমধ্যেই। বন্ধ রয়েছে ক্লাসও। জানানো হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে কলেজ। পাশে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ নাগরিকরাও। আগামী শুক্রবার থেকে অনেকেই অবস্থানে যোগ দিতে আসছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। মালদা থেকে কলকাতায় এসে পুঁজি ফুরিয়েছে, তাঁদের সাহায্য করতে তহবিল সংগ্রহও চলছে পাল্লা দিয়েই। গণস্বাক্ষর ও অর্থ সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন হুগলির চুচুড়ার ছাত্রছাত্রীরা।
তবে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না আন্দোলনকারীরা। ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কার্যত অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে দিন গুনছেন GKCIET-র ছাত্রছাত্রীরা। যদিও প্রতিজ্ঞায় অনড় তাঁরা, জানিয়েছেন ন্যায্য দাবি আদায় না করে ফিরবেন না। ইতিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনেকেই। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। অন্যদিকে প্রশাসনের থেকে কোনও উত্তর না মেলায় আবারও চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছেন প্রতারিত ছাত্রছাত্রীরা।
আরও পড়ুন: মালদা কলেজের আন্দোলনে উত্তপ্ত কলকাতা! অবস্থানের ১২ দিনেও মিলল না সদুত্তর
নিয়ম মাফিক মড্যুলার প্যাটার্নে চলত মালদার গনিখান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজ। মাধ্যমিক পাশের পর প্রথম দু বছরের ভোকেশনাল কোর্স, তারপর দু বছরের ডিপ্লোমা এবং তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং (বি টেক) পড়ার সুযোগ, এই ছিল রুটম্যাপ। ২০১৫-তে প্রথম ব্যাচ পাশ করার পর জানা যায় কলেজের কোনও সরকারী রেজিস্ট্রেশনই নেই। কাজেই ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরির জন্য চেষ্টা চালালেও সার্টিফিকেট “জাল” বলে প্রতিবারই ফিরে আসতে হয়েছে তাঁদের। সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে কোনও উত্তর দিতে পারেননি কেউ বলে দাবি ছাত্রছাত্রীদের। জুলাইয়ের প্রথম দিকেই রেজিস্ট্রার সাফ জানিয়ে দেন MAKAUT পুরোনো ছাত্রছাত্রী, অর্থাৎ ২০১০ ব্যাচের কোনও দায়িত্ব নিতে পারবে না। যদিও ২০১৮-র পর সরকারি অ্যাফিলিয়েশন পেয়েছে কলেজ।