Advertisment

মালেগাঁও অভিযুক্তরা সন্ত্রাসের ক্যাম্প চালাত, জানালেন লঙ্কেশ হত্যার তদন্তকারীরা

হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী অভিনব ভারতের চার নিখোঁজ সদস্য ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সনাতন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু সন্দেহভাজনকে দেশের একাধিক ট্রেনিং ক্যাম্পে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দেয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
gauri lankesh mm kalburgi

গৌরী লঙ্কেশ। ছবি সৌজন্য: সোশ্যাল মিডিয়া

সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ হত্যা তদন্তের জন্য গঠিত কর্ণাটক পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) বেঙ্গালুরুর একটি আদালতকে জানিয়েছে, হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী অভিনব ভারতের চার নিখোঁজ সদস্য ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সনাতন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু সন্দেহভাজনকে দেশের একাধিক ট্রেনিং ক্যাম্পে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দেয়। ওই চার সদস্যকে ২০০৬ থেকে ২০০৮-এর মধ্যে ঘটে যাওয়া সমঝোতা এক্সপ্রেস, মক্কা মসজিদ, আজমের দরগা এবং মালেগাঁও, এই চারটি বিস্ফোরণ কাণ্ডে খুঁজছে পুলিশ।

Advertisment

২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় ১৪ জন অভিযুক্তের একজন হলেন বিজেপির ভোপাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। বাকি ১৩ জনের মধ্যে রয়েছে দুই নিখোঁজ অভিনব ভারত সদস্য রামজি কালসাংগারা এবং সন্দীপ দাঙ্গে, যাদের "ঘোষিত অপরাধী" বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

গৌরী লঙ্কেশ হত্যা মামলার তদন্তকারী টিমের জমা দেওয়া নথিপত্র অনুযায়ী, হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার সনাতন সংস্থার তিনজন সদস্য, এবং আরও চারজন সাক্ষী যাঁরা বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নেন, জানিয়েছেন যে শিবিরে একজন "বাবাজী" এবং চারজন "গুরুজী" উপস্থিত ছিলেন। নভেম্বর ২০১৮ সালে ১১ বছর আত্মগোপন করে থাকার পর গুজরাতে গ্রেফতার হন "বাবাজী"। জানা যায়, তাঁর নাম সুরেশ নায়ার, এবং তিনি ২০০৭ সালের আজমের দরগা বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত।

আরও পড়ুন: বিজেপির কোন উদ্দেশ্য সাধন করছেন ‘সাধ্বী’ প্রজ্ঞা?

সূত্রের খবর, নায়ারের গ্রেফতারির ফলে এও জানা যায় যে সনাতন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত দলের প্রশিক্ষণ শিবিরের আরও তিন বোমা বিশেষজ্ঞ হলো দাঙ্গে, কালসাংগারা, এবং অশ্বিনী চৌহান, যারা প্রত্যেকেই সমঝোতা এক্সপ্রেস এবং আরও চারটি বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত। পঞ্চম প্রশিক্ষক হিসেবে যার নাম উঠে এসেছে, সেই প্রতাপ হাজরা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভবানী সেনার সঙ্গে যুক্ত।

এসআইটি-র তদন্ত চলাকালীন বিগত কয়েক মাসে বিস্ফোরণ কাণ্ডে সন্দেহভাজন নিখোঁজ অভিনব ভারতের সদস্যদের সঙ্গে গৌরী লঙ্কেশ হত্যায় জড়িত দলের যোগাযোগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ২০০৬ থেকে ২০০৮-এর মধ্যে সংঘটিত বিস্ফোরণগুলিতে প্রাণ হারান ১১৭ জন।

লঙ্কেশ মামলায় গ্রেফতার অভিযুক্তদের এবং "বোমা বিশেষজ্ঞদের" চোখে দেখা সাক্ষীদের বর্ণনার ভিত্তিতে "অতিথি প্রশিক্ষকদের" স্কেচ তৈরি করে এসআইটি, এবং প্রযুক্তির সাহায্যে নির্ধারণ করা হয় তাদের সম্ভাব্য অবস্থান। এসআইটি-র দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ২০১৮ সালের নভেম্বরে গুজরাতের ভারুচে অ্যান্টি-টেরোরিস্ট স্কোয়াডের হাতে গ্রেফতার হন নায়ার, যিনি ট্রেনিং ক্যাম্পের "বাবাজী" বলেই বিশ্বাস পুলিশের। সুত্রের খবর, নায়ারকে অন্যান্য প্রশিক্ষকদের ছবি দেখানো হলে তিনি তাদের পরিচয় দেন দাঙ্গে, কালসাংগারা এবং অমিত হাকলা ওরফে অশ্বিনী চৌহান বলে।

রাষ্ট্রীয় স্বয়মসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) প্রাক্তন সদস্য দাঙ্গে বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস রয়েছে, এবং কালসাংগারা ও হাকলার পাশাপাশি সে স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র 'মোস্ট ওয়ান্টেড' তালিকায়। দাঙ্গে এবং কালসাংগারার মাথার দাম বর্তমানে ১০ লক্ষ টাকা, এবং হাকলার পাঁচ লক্ষ টাকা। নায়ারের গ্রেফতারির পর এক এনআইএ সূত্র জানায়, দাঙ্গে এবং কালসাংগারা দুজনেই এখনও ভারতেই লুকিয়ে আছে, তাদের গ্রেফতারির চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন: হেমন্ত কারকারের মৃত্যু আমার অভিশাপে: সাধ্বী প্রজ্ঞা

গৌরী লঙ্কেশ হত্যার তদন্ত চলাকালীন গ্রেফতার হওয়া তিন অভিযুক্তের কাছ থেকে মেলে "বাবাজী"র বর্ণনা। এই তিনজন যথাক্রমে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন শিবসেনা কাউন্সিলর শ্রীকান্ত পানগারকর (৪০), শরদ কালাসকার (২৬), যে কিনা ২০১৩ সালে নরেন্দ্র দাভোলকর হত্যাকাণ্ডেও সম্ভাব্য শুটার, এবং বাসুদেব সূর্যবংশী (২৯) নামে এক মিস্ত্রি, যে ২০১৫ থেকে ২০১৭-র মধ্যে সম্ভবত সনাতন সংস্থা দ্বারা সংঘটিত একাধিক যুক্তিবাদী হত্যায় চুরি করা মোটরবাইক দিয়ে সাহায্য করেছিল বলে খবর।

এসআইটি জানতে পেরেছে যে সনাতন সংস্থার সঙ্গে জড়িত দলটি ২০১১ থেকে ২০১৭-র মধ্যে সারা দেশে ১৯টি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে, যেখানে বিষয় ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), এবং নজর এড়িয়ে পালানোর কৌশল শিক্ষা। মহারাষ্ট্র, গুজরাত এবং কর্ণাটকের পাঁচটি শিবিরে "অতিথি প্রশিক্ষক" হিসেবে যোগ দেয় পাঁচজন আইইডি বিশেষজ্ঞ।

গৌরী লঙ্কেশ মামলায় সন্দেহভাজন এবং সাক্ষীদের বয়ান অনুযায়ী, "বাবাজীর" মতন কিছু প্রশিক্ষক সাধু-সন্তের বেশে ঘুরতেন। সূত্রের খবর, প্রত্যেক প্রশিক্ষক আলাদা আলাদা বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন, পেট্রোল বোমা থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের বৈদ্যুতিক সার্কিট বসানো পাইপ বোমা (২০০৬-০৮ এর মধ্যে কিছু বিস্ফোরণে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ভিত্তিক আইইডি-র মতন), সবই তাঁদের বিচরণক্ষেত্র।

আরও পড়ুন: "কারকারে শহিদ", ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন প্রজ্ঞা ঠাকুর

আহমেদাবাদ এবং ম্যাঙ্গালোরে আয়োজিত আইইডি ক্যাম্পে তাঁর দেখা চার বিশেষজ্ঞের বর্ণনা দিতে গিয়ে লঙ্কেশ মামলায় এক অভিযুক্ত তাঁদের চিহ্নিত করেন "বাবাজী স্যার", "সার্কিট এক্সপার্ট স্যার", "বাঙালি" এবং "লম্বু স্যার" হিসেবে। জলনা-য় অনুষ্ঠিত আরেকটি শিবিরে দুই ট্রেনারকে "বাবাজী" এবং "গুরুজী" বলে অভিহিত করেন আরেক সন্দেহভাজন।

কেস ডায়েরি বলছে, এইসব শিবিরে বহু লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সনাতন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত একটি গুপ্ত গোষ্ঠীর অধীনে, যে গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ রয়েছে প্রখ্যাত যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকর, বামপন্থী বুদ্ধিজীবী গোবিন্দ পানসারে, কন্নড় পণ্ডিত এম এম কালবুর্গী এবং গৌরী লঙ্কেশ হত্যার। এইসব হত্যা মামলায় সন্দেহভাজনদের মধ্যে যারা আইইডি প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেয়, তারা হলো অমিত দেগবেকর, কালাসকর, পানগারকর, সূর্যবংশী, গণেশ মিসকিন, অমিত বড্ডি এবং ভরত কুর্নে। ওই গুপ্ত গোষ্ঠীর আরও চার সদস্য - যারা বর্তমানে লঙ্কেশ মামলায় সাক্ষী - কয়েকটি শিবিরে যোগ দেয়।

এসআইটি-র তদন্ত বলছে, অভিনব ভারতের সন্দেহভাজন সদস্যরা পাঁচ পাঁচটি ট্রেনিং ক্যাম্প করেন - ২০১১ এবং ২০১৫ সালে জলনায়, ফের ২০১৫-য় ম্যাঙ্গালোর এবং আহমেদাবাদে, এবং ২০১৬ সালে নাসিকে।

Advertisment