বছর পাঁচেকের ব্যবধান। ওড়িশার কালাহান্ডির প্রতিচ্ছবি প্রতিবেশী রাজ্য ছত্তিশগড়ের সুরগুজায়। শববাহী গাড়ির অর্থ জোগাড়ে অপারগ হয়ে কালাহান্ডিতে স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে ১২ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন দানা মাজি। যা গোটা দেশে শোরগোল ফেলেছিল। আর ছত্তিশগড়ের সুরগুজায় শববাহী গাড়ি না মেলায় সাত বছররের মেয়ের দেহ কাঁধে দশ কিমি হাঁটলেন বাবা। যার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। অস্বস্তিতে হিমন্ত সোরেন সরকার। এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ছত্তিশগড়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টি এস সিংদেও।
জানা গিয়েছে, মেয়েটি গত কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিল। জ্বর বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত সুরগুজার আমডালা গ্রামের আদিবাসী ঈশ্বর দাস শুক্রবার বছর সাতেকের মেয়েটিকে নিয়ে প্রায় দশ কিমি দূরের লক্ষ্মণপুরের কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে নিয়ে এসেছিলেন। সেখানেই মৃত্যু হয় মেয়েটির।
হেল্থ সেন্টারের আরএমএ ডাঃ বিনোদ ভার্গবের কথায়, 'মেয়েটিকে যখন অসুস্থ অবস্থায় শুক্রবার সকালে লক্ষ্মণপুরের কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছিল তখনই ওঁর শারীরির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৬০। গত বেশ কয়েকদিন ধরে ওঁর জ্বরও ছিল। হেল্থ সেন্টারে মেয়েটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করার প্রস্তুতিও শুরু হয়। কিন্তু বাচ্চাটির অবস্থার অবনতি ঘটে। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ মেয়েটির মৃত্যু হয়।'
কিন্তু কেন মেয়ের মৃতদেহ কাঁধে বাবাকে দশ কিমি হাঁটতে হল? ডাঃ বিনোদ ভার্গবের দাবি, 'বাচ্চাটার মৃত্যুর পরই আমরা ওঁর বাবাকে অপেক্ষা করতে বলি। জানাই যে, অ্যাম্বুলেন্স কিছুক্ষণের মধ্যে মৃতদেহ নিয়ে যাবে। সেটি সকাল ৯.২০ নাগাদ এসেছিল। কিন্তু ততক্ষণে ঈশ্বর দাস ওঁর মেয়ের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন।'
ভাইরাল ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে যে, চাদরে মুড়ে মেয়ের মৃতদেহ কাঁধে হাঁটছেন অসহায় ঈশ্বর। এইভাবেই দশ কিমি দূরে নিজের গ্রাম আমডালায় পৌঁছেছিলেন তিনি।
এই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। যা কানে যেতেই ছত্তিশগড়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টি এস সিংদেও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সিংদেও বলেছেন, 'ভিডিওটি আমি দেখেছি। খুবই হৃয়বিদারক। তদন্তের পর কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছি সিএমওএইচ-কে। যাঁরা সেই সময় হেল্থ সেন্টারে কর্তব্যরত ছিলেন তাঁরা কোনওভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না, ওদের সরাতে বলেছি।' মন্ত্রীর সংযোজন, 'স্বাস্থ্য কর্মীরা যাঁরা সেই সময় ডিউটিতে ছিলেন তাঁদের উচিত ছিল পরিবারকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে রাজি করানো।'
Read in English