ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হরিয়ানার নুহ। নুহ-তে উত্তেজনার জেরে এবার গুরুগ্রামের একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, ধর্মীয় শোভাযাত্রায় হামলার জেরে নুহ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, গোটা এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা, রাস্তায় নামানো হয় আধা সেনা। সেই সঙ্গে নুহ এবং ফরিদাবাদে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা।
সোমবার সন্ধ্যায় নুহতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুরগাঁওয়ের অঞ্জুমান জামা মসজিদের ইমাম মহম্মদ সাদের আত্মীয়রা তার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ২২-বছরের তরতাজা যুবক অবশ্য তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘তিনি নিরাপদ থাকবেন কারণ মসজিদের বাইরে "পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন" রয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১২.১০ নাগাদ, ১০০ জনের একটি দল সেক্টর ৫৭-এ নির্মীয়মান মসজিদে ঢুকে আগুন লাগানোর পরে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। জানা গিয়েছে মহম্মদ সাদকে ঘাড়ে, বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। একই সঙ্গে অঞ্জুমান জামা মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক মহম্মদ খুরশিদও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। গুরগাঁও পুলিশ কমিশনার কালা রামচন্দ্রন জানিয়েছেন, এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নূহ হিংসার আগুন অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। গুরুগ্রামের সেক্টর-৫৭-এ একটি মসজিদে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে উন্মত্ত জনতা। একই সময় হিংসার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।
হরিয়ানা পুলিশ সোমবার থেকে নুহ এবং প্রতিবেশী জেলাগুলিতে হিংসার ঘটনায় ৪৪টি এফআইআর দায়ের করেছে। প্রায় ৭০ জনকে হেফাজতে নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর মঙ্গলবার চণ্ডীগড়ে তাঁর সরকারি বাসভবনে এই বিষয়ে একটি বৈঠক করেন। পরে তিনি দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। খট্টর জানিয়েছেন যে দাঙ্গাবাজদের রেহাই দেওয়া হবে না।
এর আগে সোমবার বিকেলে নুহতে শুরু হওয়া হিংসার বিষয়ে বলতে গিয়ে খট্টর বলেন, ‘কোনও দাঙ্গাবাজকে রেহাই দেওয়া হবে না। তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের মত প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’ নিহতদের মধ্যে দুজন হোমগার্ড, তিনজন সাধারণ নাগরিকও আছেন।
ঘটনাগুলিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু লোক একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে। এই সামাজিক অনুষ্ঠান প্রতিবছরই পরিচালিত হয়। সেই সামাজিক অনুষ্ঠানকে বিঘ্নিত করার জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশকেও নিশানা করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ। বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। নুহ ছাড়া অন্য এলাকার যারা এই ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল, তাদের চিহ্নিত করার পর তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খট্টর যোগ করেছেন যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ১৬টি কোম্পানি এবং হরিয়ানা পুলিশের ৩০টি কোম্পানি নুহতে পৌঁছয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া পালওয়াল, গুরগাঁও এবং ফরিদাবাদের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও স্বাভাবিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ওই সব জেলায় শান্তিও ফিরে এসেছে। তবুও কিছু জেলায় ১৪৪ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নুহতে কারফিউ বলবৎ রয়েছে।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেলে গুরগাঁও থেকে হিংসার আরেকটি ঘটনার কথা জানা গেছে। বাদশাপুরের দুটি দোকানে দুপুর ২টোর দিকে জনতা আগুন দিয়েছিল। আশপাশের দোকানদারদের মতে, হামলার জেরে স্থানীয় বাসিন্দারা পালিয়ে বাঁচেন। বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ‘ব্রিজ মণ্ডল জলাভিষেক যাত্রা’ বের করেছিল। তখনই একটি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ছড়ায়। যাতে দুই হোম গার্ড-সহ কমপক্ষে চার জন নিহত হন। এই হিংসার ঘটনায় ১২ জন পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন।
তারই মধ্যে, গুরগাঁওয়ে হিংসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে মঙ্গলবার ভোরে একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আঞ্জুমান জামা মসজিদের ইমামকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই মসজিদ সেক্টর ৫৭ এলাকায় অবস্থিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৭০-৮০ জন লোক জড়িত ছিল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একটি ধর্মীয় মিছিলকে আটকানোর চেষ্টা অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হরিয়ানার নুহ। মৃতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার এই তথ্য দেওয়ার সময়, পুলিশ জানিয়েছে যে নুহ-তে হিংসার পরে, গুরুগ্রামের সেক্টর ৫৭-এ জনতার হামলায় একজন নিহত এবং একটি মসজিদে আগুন দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার হরিয়ানার হিংসা বিধ্বস্ত নুহ জেলায় কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ বলেছে যে হিংসার ঘটনা গুরুগ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। শহরের সেক্টর-৫৭-এ একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার বলেছেন উন্মত্ত জনতা গুলিও চালায়, যার কারণে দুজন আহত হয় এবং তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসার সময় মারা যায়। ওই কর্মকর্তা জানান, নিহত ব্যক্তির নাম মহম্মদ সাদ, তিনি বিহারের বাসিন্দা। ইতিমধ্যে হিংসার ঘটনায় ২৯টি FIR দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ১১৬ জন।
নূহ শহরে সহিংসতায় আহত ২৩ জনের মধ্যে ১০ জন পুলিশকর্মীও রয়েছেন। দাঙ্গায় পুলিশের আটটি গাড়িসহ ৫০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ মঙ্গলবার জানিয়েছেন যে নুহ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর সোমবার বলেছেন যে এই ঘটনার জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে "কঠোর ব্যবস্থা" নেওয়া হবে। তিনি টুইট করে লিখেছেন যে আজকের ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য আমি সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। দোষীদের কোন ভাবেই রেয়াত করা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।