নিউ ইয়র্ক-দিল্লি বিমানে বৃদ্ধার গায়ে প্রস্রাবের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারির পরিকল্পনা দিলি পুলিশের। দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে ধরতে ইতিমধ্যেই একটি সিট গঠন করা হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ৩০ দিনের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সূত্রের খবর বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশ অভিযুক্ত শঙ্কর মিশ্রের বিরুদ্ধে লুক আউট সার্কুলার (এলওসি) চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। দিল্লি পুলিশের এক সিনিয়ার আধিকারিক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, "মিশ্র মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। আমরা তদন্তকারী দলকে তার খোঁজে মুম্বইতে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু সে পলাতক। দিল্লি পুলিশ তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করা হতে পারে"।
বুধবার দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক বলেছেন যে তারা এয়ার ইন্ডিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এফআইআর দায়ের করেছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইপিসির ধারা ৩৫৪ এবং ৫০৯ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় বিমান চলাচল আইনের ২৩ নং ধারাতেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি জানান, নির্যাতিতা মহিলা এবং অভিযুক্ত দুজনেই দিল্লিতে থাকেন না। পুলিশ সূত্রে খবর, মহিলার আশেপাশে বসে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকেও অভিযুক্তের বিষয়ে বিশদ তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। দোষীকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করা হবে যাতে তিনি দেশ ত্যাগ করতে না পারেন।
নিউ ইয়র্ক-দিল্লি বিমানে মূত্রত্যাগের ঘটনায় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিল অসামরিক বিমান পরিবহণ সংস্থা বা ডিজিসিএ। বৃহস্পতিবার ওই নোটিসে বলা হয়েছে, বিমান সংস্থাটির আচরণ ‘অপেশাদার’। যাকে পদ্ধতিগত ব্যর্থতা বলেও মনে করছে ডিজিসিএ। গত ২৬ নভেম্বর, এয়ার ইন্ডিয়ার নিউ ইয়র্ক-দিল্লি (এআই ১০২) নম্বর বিমানে এক তথাকথিত মদ্যপ যাত্রী এক বয়স্ক মহিলার গায়ে মূত্রত্যাগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ৪ জানুয়ারি ডিজিসিএর নজরে আসে।
এয়ার ইন্ডিয়া এই ব্যাপারে উত্তরে যা জানিয়েছে, তাতে ডিজিসিএর ধারণা হয়েছে বিমান সংস্থাটি অবাধ্য যাত্রীর ক্ষেত্রে যে বিধি রয়েছে, সেই বিধি অনুসরণ করেনি। তার ফলেই গোটা ঘটনাটি ঘটেছে। আর, তারই প্রেক্ষিতে এয়ার ইন্ডিয়ার কড়া সমালোচনা করে ডিজিসিএ বলেছে, ‘সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার আচরণ অপেশাদার বলেই মনে হচ্ছে। গোটা ঘটনাটি পদ্ধতিগত ব্যর্থতার জন্যই ঘটেছে।’ বিমানে বিধি মানা নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার অবহেলার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে ডিজিসিএ। একইসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছে, দায়িত্বে অবহেলার জন্য কেন এয়ার ইন্ডিয়ার আধিকারিক এবং বিমানসেবক বা সেবিকাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?
আরও পড়ুন: < Exclusive: রাজপথে দুর্ঘটনার সময় চালক ছিলেন নিজের বাড়িতেই, তদন্তে নেমে চোখ কপালে পুলিশের >
এতেই না-থেমে ডিজিসিএ আরও বলেছে, ‘এয়ার ইন্ডিয়ার জবাবদিহি ব্যবস্থাপক, এয়ার ইন্ডিয়ার ইন-ফ্লাইট পরিষেবার পরিচালক, সেই ফ্লাইটের সমস্ত পাইলট এবং কেবিন ক্রু সদস্যদের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। কেন নিয়ন্ত্রক বিধি অবহেলার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়, সেই কারণ তাঁদের জানাতে হবে।’
এয়ার ইন্ডিয়ার এই ঘটনার তদন্তের পর দিল্লি পুলিশের মতে, যারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন, সেই অভিযোগে লোকটি মাতাল হয়ে মূত্রত্যাগ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু, বিমান সংস্থাটি তারপরও কোনও ব্যবস্থা না-নিয়েই লোকটিকে যেতে দিয়েছে। বছর ৭০-এর ওই মহিলা এরপর এয়ার ইন্ডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরনকে চিঠি লিখে তাঁর অভিযোগ জানিয়েছেন।
সেই চিঠিতে ওই মহিলা জানিয়েছেন, এক মাতাল সহযাত্রী শরীর উন্মুক্ত করে তাঁর গায়ে মূত্রত্যাগ করে দিয়েছিলেন। তাতে তাঁর জামাকাপড়, জুতো এবং ব্যাগ ভিজে যায়। এরপর বিমানসেবিকা এসে যাচাই করে ওই আসনে মূত্রের গন্ধ পান। তিনি ওই মহিলার ব্যাগ, জুতোয় জীবাণুনাশক স্প্রে করে দেন।