দেশে ধর্ষকদের উদ্দেশে আবারও কড়া বার্তা দিল দেশের বিচার ব্যবস্থা। মধ্য প্রদেশের মান্দসৌরে ৭ বছরের শিশুকে গণধর্ষণের ঘটনায় দোষী দু'জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনাল দায়রা আদালত। ঘটনার দু'মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে রায় দিল আদালত। সাত বছরের শিশুকে গণধর্ষণ করাই শুধু নয়, শিশুর গোপনাঙ্গে ছুরি দিয়ে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে, তাতে এ ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে আখ্যা দিয়েছে আদালত। এ ঘটনায় দুই দোষী সাব্যস্ত ইরফান ওরফে ভাইয়ু মেভাতি (২০) এবং আসিফ জুলফিকর মেওয়াতিকে যে কোনভাবেই রেহাই দেওয়া যায় না, সেকথাও উল্লেখ করা হয়েছে আদালতে। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক নিশা গুপ্তা বলেন, "এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা, কারণ অভিযুক্তরা জঘন্য অপরাধ করেছে। ওরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত থাকেনি, নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে, যার জেরে শিশুটি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। কোনভাবেই ওদের প্রশ্রয় দেওয়া যায় না।" ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ডিবি ধারায় দোষীদের সাজা শোনানো হয়েছে আদালতে। এ নিয়ে বিভিন্ন আদালত মিলিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪টি মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছে ওই রাজ্যে।
আদালতের রায় প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেন, "বিচার ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ। সমাজে ইতিবাচক বদল হচ্ছে, কারণ বিকৃত মানসিকতার অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হচ্ছে এবং দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে...এ ধরনের সাজা ধর্ষকদের কাছে শিক্ষণীয়।''
#WATCH: BJP leader Vinay Dubela slaps one of the two Mandsaur rape accused while they were being produced before the court. The two accused have been awarded death sentence in the rape case. #MadhyaPradesh pic.twitter.com/8fjqKikkkt
— ANI (@ANI) August 21, 2018
দোষীদের শাস্তির প্রসঙ্গে নির্যাতিতার এক আত্মীয় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, "রায় ভাল হয়েছে। অপরাধীরা অন্য কাউকে আর টার্গেট করতে পারবে না। কালই ওদের ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।" নির্যাতিতা শিশুর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে তিনি জানান। আট দিন আগে শিশুটির একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে বলেও ওই আত্মীয় জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার আদালতের রায়ের পর দোষীদের নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সামনেই এক দোষীকে সপাটে চড় কষানোর অভিযোগ উঠেছে হিন্দু মহাসভার এক কর্মীর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন, গণপিটুনি রুখতে আইনী সংশোধনের পথে কেন্দ্র
গত ২৬ জুন স্কুলের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়েছিল তৃতীয় শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে। স্কুলের গেটের সামনে ঠাকুমার জন্য অপেক্ষা করছিল শিশুটি। পরের দিন তাকে পাওয়া যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির সঙ্গে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা সামনে আসার পরই রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ২৭ জুন প্রথমে ইরফানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে জেরা করে পরের দিনই আসিফকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতরা মান্দসৌরের মাদারপুরা এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।
এ ঘটনায় গত ১২ জুলাই ৩৫০ পাতার চার্জশিট পেশ করা হয়। ৩০ জুলাই ঘটনার সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া শুরু হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রসিকিউশন অফিসার নীতেশ কৃষ্ণন জানান, ৪৭ জন সাক্ষীর নাম জমা পড়ে, যদিও ৩৭ জনের বয়ান নেওয়া হয়, কারণ তাতেই কাজ মিটে গিয়েছে। নির্যাতিতা শিশু দুই দোষীকে চিহ্নিত করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।